শিক্ষা

দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি

Advertisement

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আবারও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন। রোববার মধ্যরাতে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার পর রাতের অল্প সময়ের মধ্যেই আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ সোমবার দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলবে এবং অবিলম্বে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিও শুরু হবে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি দুটোই চলবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব। শিক্ষকরা ন্যায্য অধিকার পেতে চাই, এবং আমরা এর জন্য সকল পর্যায়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখব।”

কর্মবিরতি স্থগিতের মধ্যরাত্রির সিদ্ধান্ত বদল

এর আগে রোববার রাতে সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নেতারা কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন। গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কর্মবিরতি আপাতত স্থগিত রাখা হলো। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তথ্য অধিদপ্তরও গণমাধ্যমে একই তথ্য নিশ্চিত করে।

কিন্তু মধ্যরাতে শিক্ষকদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নেতারা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। পরিষদের একজন নেতা জানান, “আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে এবং আমাদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আজ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সেই কারণে আমরা সরকারকে কর্মবিরতি স্থগিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। কিন্তু শহীদ মিনারে এসে সহকারী শিক্ষকরা সেটি মেনে নেননি। তাদের চাপের মুখে আমাদের সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়েছে। শিক্ষক সমাজ কর্মবিরতি স্থগিতের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ছিলেন, তাই আমরা তা পরিবর্তন করেছি।”

শিক্ষকদের দাবি ও বৈঠক

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মূলত তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলো দশম গ্রেডে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, চাকরির স্থায়িত্ব নিশ্চিতকরণ, এবং অন্যান্য কর্মসংস্থান সংক্রান্ত সুবিধা। আজ সোমবার এই দাবিসমূহ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে।

শিক্ষকদের প্রতিনিধিদল বৈঠকে উপস্থিত হয়ে তাদের দাবি যথাযথভাবে তুলে ধরবেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দশম গ্রেডে বেতন বৃদ্ধি, যা শিক্ষক সমাজের মধ্যে দীর্ঘদিনের দাবি। তারা আশাবাদী, সরকারের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে এবং তাদের ন্যায্য দাবিগুলি পূরণ হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “আমরা সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দেওয়ার প্রস্তাব ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এটি বিবেচনাধীন। কিন্তু সহকারী শিক্ষকরা এখন দশম গ্রেড চাচ্ছেন। এটি কতটা বাস্তবসম্মত এবং সরকারের পক্ষে কতটা সম্ভব, তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা শিক্ষকদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করবেন।”

তিনি আরও বলেন, “তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কর্মবিরতি স্থগিত রাখার। যদি সেই প্রতিশ্রুতি না মানা হয়, তবে তা দুঃখজনক। আমরা আশা করি শিক্ষকরা সংলাপের মাধ্যমে সমাধান খুঁজবেন। আমরা তো দ্রুত সাড়া দিয়েছি এবং আলোচনার পথ খোলা রেখেছি, তাই কর্মবিরতি কেন?”

শিক্ষকদের আন্দোলনের পেছনের কারণ

বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে চাকরির স্থায়িত্ব, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি এবং পদোন্নতি গ্রেডসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমস্যার মুখোমুখি। সরকারি নীতি ও বাজেটের সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়িত হয়নি। এর ফলে শিক্ষক সমাজের মধ্যে হতাশা এবং অসন্তোষ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সর্বশেষ, প্রাথমিক শিক্ষকরা বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য দশম গ্রেডে উন্নীত হওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। তারা মনে করেন, এই পদোন্নতি তাদের কাজের মর্যাদা ও সামাজিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করবে। শিক্ষকরা বলেন, “আমরা দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্বে রয়েছি। তাই আমাদেরও ন্যায্য সম্মান ও সুবিধা পাওয়ার অধিকার আছে।”

শহীদ মিনার: আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ইতিমধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি এবং ধীর গতির যাত্রা শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে যথেষ্ট প্রভাব পড়লেও শিক্ষকরা মনে করছেন, তাদের ন্যায্য দাবি পূরণ হলে দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে।

শিক্ষক সমিতি নেতারা জানান, “শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি একটি সাংকেতিক এবং শক্তিশালী পদক্ষেপ। এটি আমাদের একতা এবং দৃঢ় সংকল্পের প্রতিফলন। আমরা ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ়। কোনও পদক্ষেপ বা বাধা আমাদের থামাতে পারবে না।”

সরকারের প্রতিক্রিয়া ও সমাধানের পথ

সরকার এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষক সমাজের দাবি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চলমান আলোচনার মাধ্যমে বেতন ও গ্রেড বৃদ্ধির প্রস্তাবনা বিবেচনাধীন রয়েছে। তবে, শিক্ষকরা তাদের চূড়ান্ত দাবি থেকে সরে আসছেন না।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা শিক্ষক সমাজের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা তাদের জন্য সেরা সমাধান খুঁজে বের করতে চাই। আশা করি আলোচনার মাধ্যমে এই আন্দোলনের সমাপ্তি হবে। আমাদের লক্ষ্য, শিক্ষকরা সন্তুষ্ট হোক এবং শিক্ষার মানও উন্নত হোক।”

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

শিক্ষক সমাজের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি এবং অবস্থান কর্মসূচি চলমান থাকবে। পাশাপাশি তারা অন্যান্য শহরে এবং জেলা পর্যায়েও আন্দোলনের কার্যক্রম বাড়াতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই আন্দোলন শিক্ষক সমাজের এক ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

শিক্ষকরা বলছেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য সড়কে আছি। শিক্ষার্থীর ক্ষতি করা আমাদের লক্ষ্য নয়। তবে আমাদের ন্যায্য অধিকার আমরা পেতে চাই। সরকার ও শিক্ষাবোর্ডের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা আমাদের দাবি পূরণ করতে চাই।”

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য অধিকার, বেতন-ভাতা এবং গ্রেড উন্নয়নের দাবিতে সড়কে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ও আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা চেষ্টা চলছে। তবে শিক্ষকরা স্থিরভাবে বলছেন, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি এবং অবস্থান কর্মসূচি চলবে।

এ আন্দোলন শিক্ষকদের একতা, সংকল্প এবং দেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে তাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আগামীদিনে এই আন্দোলন শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন পরিবর্তন এবং ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

MAH – 13723 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button