বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেছেন, দলের নেতাদের প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি এক ধরনের আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া আমার মা, জিয়াউর রহমান আমার বাবা, আর আমাদের নেতা তারেক রহমান আমার ভাই। ৪৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নাম যতবার নিয়েছি, যদি আল্লাহর নামও সমানভাবে নিয়ে থাকতাম, হয়তো বেহেশতের কাছাকাছি চলে যেতাম।”
এই মন্তব্য তিনি রোববার (৯ নভেম্বর) বিকেলে নাটোরের বাগাতিপাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে করেছেন।
নারীদের কোটায় মনোনয়ন নিয়ে টিপুর আক্ষেপ
দলের মনোনয়ন প্রক্রিয়া ও নীতিমালা নিয়ে টিপু বলেন, “যদি নারী কোটায় মনোনয়ন দেওয়া হয়, তবে সত্যিকার রাজপথের কর্মীদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। যারা রাজপথে ছিলেন, যারা দলের জন্য পরিশ্রম করেছেন, তাদের সুযোগ দেওয়া উচিৎ। কিন্তু দেখা যায়, দুধের সর খাওয়া বা রাজপথে অদৃশ্য যারা তাদের অধিকাংশ মনোনয়ন পেয়েছে। আমার জানা অনুযায়ী, মাত্র চারজনকে ছাড়া অন্যরা ঠিকমতো জিয়াউর রহমানের নামও নিয়েছে কিনা, তা আমি নিশ্চিত নই।”
এই মন্তব্যে টিপু স্পষ্ট করেছেন যে, তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গে দলের হাইকমান্ডের মনোনয়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে দূরত্ব রয়েছে এবং তাতে দলের সত্যিকারের পরিশ্রমী নেতাকর্মীরা প্রাধান্য পাচ্ছেন না।
নাটোর-১ আসনে মনোনীত প্রার্থীর সমালোচনা
নাটোর-১ আসনে মনোনীত প্রার্থী ও স্থানীয় রাজনীতিকে নিয়েও টিপু বলেছেন, “দল যাকে লালপুর-বাগাতিপাড়ায় মনোনয়ন দিয়েছে, তিনি আসলে ওই এলাকার নন। তিনি মাদারীপুরের মানুষ। অথচ লালপুর-বাগাতিপাড়ার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। আমরা হতাশ, কারণ স্থানীয় কোনো মানুষ মনোনয়ন পাননি। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে দলের হাইকমান্ডকে অনুরোধ করব, তৃণমূলের জনগণ যাকে চায়, সেই বিষয়ে পুনর্মূল্যায়ন করা হোক।”
তিনি আরও বলেন, “লালপুর-বাগাতিপাড়ায় বিএনপির রাজনীতিতে যার বয়স মাত্র ২ বছর, তাকে মনোনীত করা হয়েছে। মনোনয়নের পরই আমাদের ছাত্রদল কর্মী জিল্লুরকে রক্তাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে ধমক দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির এই নেতা ও কর্মীদের ভোট হয়তো দলের হাইকমান্ডের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু স্থানীয়দের জন্য এটা খুবই বড় সমস্যা।”
রাজনৈতিক চিত্র ও দলের প্রতিক্রিয়া
টিপুর এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় স্তরের মধ্যে মনোনয়ন প্রক্রিয়া এবং নেতৃত্বের নীতিমালায় বিরোধ রয়েছে। রাজপথের কর্মীদের উপেক্ষা এবং স্থানীয় জনমতের প্রতি হাইকমান্ডের অসতর্ক মনোভাব দলের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের মনোনয়ন বিতর্ক বিএনপির স্থানীয় শক্তি ও জনসংযোগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনের সময়, দলের তৃণমূল কর্মীদের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ।
স্থানীয় নেতাদের ক্ষোভ
নাটোর-১, লালপুর-বাগাতিপাড়া এলাকায় বিএনপির কার্যক্রম পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দলীয় সিদ্ধান্তের ফলে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ বেড়েছে। টিপুর বক্তব্যে উঠে এসেছে যে, মনোনয়ন বিতর্ক এবং নেতাকর্মীদের প্রতি অনৈতিক আচরণ তাদের রাজনৈতিক আগ্রহকে প্রভাবিত করছে।
এছাড়া, ছাত্রদল ও স্থানীয় যুবনেতারা অভিযোগ করেছেন যে, মনোনয়নের পর তাদের নিরাপত্তা ও সম্মান হুমকির মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতি বিএনপির জন্য গুরুতর একটি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তাইফুল ইসলাম টিপুর মন্তব্য বিএনপির রাজনীতি ও মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও ন্যায়পরায়ণতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। তিনি দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একই সাথে বর্তমান মনোনয়ন প্রক্রিয়ার দিকে সতর্কবার্তা প্রদান করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দলের স্থানীয় শক্তি ও জনমতের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মনোনয়ন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন না হলে, দলের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
MAH – 13717 I Signalbd.com



