ফিলিপিন্সের বৃহত্তম দ্বীপ লুজোনের দিকে ধেয়ে আসছে সুপার টাইফুন ফাং ওয়াং, যার বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার। আবহাওয়া অধিদপ্তর পাগাসার তথ্য অনুযায়ী, ঝড়ের সঙ্গে প্রচণ্ড বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার প্রভাবে অঞ্চলটিতে প্রাণহানির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই বহু মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে ‘উওয়ান’ নামে পরিচিত এই টাইফুনটি আগের ঝড় কালমায়েগির কয়েকদিন পর এসেছে, যা ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হয়ে প্রায় ২০০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল।
ঝড়ের পথ ও তীব্রতা
ফাং ওয়াং পূর্বাঞ্চলীয় বিকল অঞ্চলে প্রথম আঘাত হানেছে, এবং রাতের মধ্যে লুজোনের প্রধান জনবহুল এলাকাগুলোও ঝড়ের প্রভাবে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাগাসার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থলভাগে আঘাত হানার পর ঝড়টি কিছুটা দুর্বল হলেও লুজোন অতিক্রম করার সময় এটি এখনও সুপার টাইফুনের পর্যায়ে থাকবে।
এতে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিমি পর্যন্ত পৌঁছাবে এবং প্রচণ্ড বৃষ্টি নেমে আসবে। ইতিমধ্যেই ফিলিপাইনের পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জরুরি ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা সতর্কতা
ফিলিপাইনের কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই প্রভাবিত এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। নয় লাখের বেশি মানুষকে পূর্বাভাস অনুযায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সেকারণে স্কুলগুলো সোমবারের ক্লাস বাতিল করেছে অথবা অনলাইনে স্থানান্তর করেছে। ফিলিপাইন এয়ারলাইন্সও কয়েকটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করেছে, যাতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
পাগাসার এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রবল ঝড় ও বৃষ্টিপাতের কারণে জনজীবন বিপদে রয়েছে। আমরা সকলকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।”
ফাং ওয়াংয়ের আগের ঝড় কালমায়েগি ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সেই ঝড়ের ফলে দক্ষিণ ফিলিপিন্সে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, প্রায় ২০০ জন নিহত হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। ফাং ওয়াংয়ের আগমন পূর্ববর্তী ঝড়ের ক্ষতির স্মৃতি সতর্কতার কারণে নতুন প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পূর্বের ঝড়ের ধ্বংসযজ্ঞের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এবার আরও দ্রুত মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হচ্ছে।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
ফিলিপিন্সের প্রধান দ্বীপ লুজোনে সুপার টাইফুনের প্রভাব সমাজ ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। সড়কপথে যোগাযোগ বিঘ্নিত হবে, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কৃষি ক্ষেত্রেও ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে ধান ও ফলের বাগানে।
ফিলিপাইন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বাতিল এবং স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঝড়ের পূর্বাভাস এবং সতর্ক ব্যবস্থা ক্ষতির মাত্রা কমাতে সহায়ক হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অবস্থান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফাং ওয়াং সুপার টাইফুন হওয়ায় তীব্র ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারে। তাদের পরামর্শ, স্থানীয় জনগণ পূর্বাভাস অনুযায়ী নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত সরকারি সতর্কতা মানা।
একটি আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ বলেন, “এ ধরনের সুপার টাইফুন খুবই বিপজ্জনক। ঘণ্টায় ১৮৫ কিমি বেগের বাতাস এবং ভারী বৃষ্টিপাত অবকাঠামো এবং জনজীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি।”
আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি
ফিলিপিন্সের বাইরে এ ধরনের ঝড় আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলো তাদের পর্যবেক্ষণ বাড়াচ্ছে এবং ফিলিপিন্সের সঙ্গে সমন্বয় করছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে প্রয়োজনে মানবিক সহায়তা প্রদান করা যায়।
সুপার টাইফুন ফাং ওয়াং ফিলিপিন্সের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। ঘণ্টায় ১৮৫ কিমি বেগের বাতাস এবং প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত জনজীবন ও অবকাঠামোর জন্য বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। প্রশাসনের আগেভাগে নেওয়া সতর্ক ব্যবস্থা এবং নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রগুলো ক্ষতির মাত্রা কমাতে সহায়ক হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঝড়ের গতিপথ এবং তীব্রতা অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক সহায়তা ও স্থানীয় প্রস্তুতি জরুরি। ফিলিপিন্সের সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে এবং সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে।
এম আর এম – ২১৫৯,Signalbd.com



