বাংলাদেশ

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে সহস্রাধিক

Advertisement

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত এই রোগে আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, আর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সহস্রাধিক নতুন রোগী। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ৩১৩ জনে দাঁড়িয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছয়জন, হাসপাতালে ভর্তি সহস্রাধিক

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে নতুন করে ১,১৯৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ভর্তি হয়েছেন ৩৩৫ জন, আর ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ভর্তি হয়েছেন ৮৬০ জন।

এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন আরও ৬ জন। এ নিয়ে চলতি বছরে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১৩ জনে।

বিভাগভিত্তিক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভাগভিত্তিকভাবে ভর্তি রোগীর সংখ্যা নিম্নরূপ:
ঢাকা বিভাগে (ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ) ৬১৩ জন, বরিশালে ১৫৫ জন, চট্টগ্রামে ১৩২ জন, খুলনায় ১১৪ জন, রাজশাহীতে ১১৩ জন, ময়মনসিংহে ৫৯ জন এবং সিলেটে ৯ জন।
এই সংখ্যাগুলো আগের সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বেশি, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে নতুন সংক্রমণের হার আবারও বাড়ছে।

চলতি বছরের সামগ্রিক চিত্র

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সারাদেশে মোট ৭৮ হাজার ৫৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী দেখা গেছে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি ছিল।
গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি, যা বিশেষজ্ঞদের মতে উদ্বেগের কারণ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সতর্কবার্তা

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃষ্টি কমলেও এখনো এডিস মশা বংশবৃদ্ধির উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। ফলে সংক্রমণ কমেনি, বরং ঘরের ভেতরে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়েছে।
এক কর্মকর্তা বলেন, “এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে। তাই বাড়ির বারান্দা, ফুলের টব, ফ্রিজের ট্রে বা অল্প পানি জমে থাকা জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।”
তিনি আরও জানান, রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিলে মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।

রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে চাপ

ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও রোগীর চাপ বাড়ছে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, “এখনও প্রতিদিন গড়ে ৫০–৬০ জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই রোগীরা জ্বরের তিন-চার দিন পর আসছেন, যা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে গুরুতর অবস্থার রোগী বেশি দেখা যাচ্ছে।

জনসচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জনসচেতনতা ও স্থানীয় উদ্যোগ।
বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুল হুদা বলেন, “সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। বাড়ির আশপাশে পানি জমতে না দেওয়া এবং মশার কামড় থেকে সুরক্ষা নেওয়াই এখন মূল কাজ।”
তিনি আরও বলেন, “ডেঙ্গু এখন কেবল মৌসুমি নয়, সারাবছরের ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। তাই এটি মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জরুরি।”

আগামী দিনগুলোতে কী হতে পারে

বিশ্লেষকদের মতে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ডিসেম্বর নাগাদ সংক্রমণের হার কমতে পারে। তবে এখনো ঝুঁকি পুরোপুরি শেষ হয়নি।
শীত আসার আগে পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
তারা পরামর্শ দিয়েছেন, জ্বর দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার এবং স্বনির্ধারিত ওষুধ না খাওয়ার জন্য।

দেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। প্রতিদিনই নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল সরকারি প্রচেষ্টা নয়, প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণ ছাড়া এডিস মশা দমন সম্ভব নয়।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখনই সচেতনতা, দায়িত্ববোধ এবং সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

এম আর এম – ২১৪৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button