বাংলাদেশ

নন-এমপিও শিক্ষক আন্দোলন: পুলিশি অ্যাকশন, আহত অর্ধশতাধিক

Advertisement

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রোববার বিকেলে নন-এমপিও শিক্ষকরা যখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করছিলেন, তখন পুলিশের লাঠিচার্জ, জলকামান এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এতে অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা আহত হয়েছেন। এই ঘটনা শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে চলমান আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

দীর্ঘদিনের দাবি: এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষকদের লড়াই

নন-এমপিও শিক্ষকরা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছেন। তবুও সরকারী স্বীকৃতি ও বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে এবং মানবেতর জীবনযাপন থেকে মুক্তি পেতে নন-এমপিও শিক্ষকরা চরম ভুক্তভোগী। তাদের প্রধান দাবি হলো, সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে হবে, যেন শিক্ষকেরা সরকারি সুবিধা ও বেতন ভাতা পেতে পারেন।

সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয় অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সেলিম মিয়া জানান, “সকাল থেকেই আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলাম। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দুপুর আড়াইটার সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে পালন করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বিনা উসকানিতে পুলিশ আমাদের উপর চড়াও হয়। সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে আমাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়। আমি নিজেও এতে আহত হয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের অবস্থান কর্মসূচি শিক্ষকদের এমপিও প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে। আমরা শিক্ষার্থীদের অধিকার ও শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখব।”

পুলিশ ও শিক্ষকদের মধ্যে সংঘর্ষ: পুলিশি ব্যাখ্যা

শাহবাগ থানার পরিদর্শক (পেট্রোল) বুলবুল আহমেদ জানান, “নন-এমপিও শিক্ষকরা দুপুরের দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে গেলে আমাদের সতর্ক করা হয়েছিল। নেতারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু সাধারণ শিক্ষকরা তা অমান্য করে পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়। এক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করা হয়। তবে লাঠিচার্জের কথা আমরা অস্বীকার করছি।”

এই ঘটনার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও, শিক্ষকরা এখনো আন্দোলনে অব্যাহত রয়েছেন। তাদের মতে, সরকার যদি তাদের দাবি মেনে নেয়, তবেই শান্তি স্থায়ী হতে পারে।

নন-এমপিও শিক্ষকদের দীর্ঘ আন্দোলন

উল্লেখযোগ্য যে, নন-এমপিও শিক্ষকরা দীর্ঘ ১৮ দিন ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এই আন্দোলন শুধু বেতন বা সরকারি সুবিধা পাওয়ার জন্য নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে এক অব্যাহত সংগ্রাম। শিক্ষকরা বলছেন, “আমরা আমাদের ছাত্রদের জন্য লড়ছি। আমাদের পরিবার ও শিক্ষার্থীরা আমাদের উপর নির্ভর করছে। তাই আমাদের দাবি গ্রহণ না হলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে।”

শিক্ষকদের অবস্থান ও মানবিক সংকট

নন-এমপিও শিক্ষকদের পরিবারগুলোর জীবনের উপর এই দীর্ঘ আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে। বিনা বেতনে শিক্ষকরা পরিবার এবং নিজেদের জীবিকা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ অর্থায়নে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এই মানবিক সংকট শিক্ষকদের আন্দোলনকে আরও দৃঢ় এবং তীব্র করে তুলেছে।

সরকারের পদক্ষেপের প্রত্যাশা

শিক্ষকরা আশা করছেন, সরকার তাদের দাবি মেনে নেবে এবং সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার প্রজ্ঞাপন জারি করবে। তারা বিশ্বাস করেন, শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য এটি একমাত্র কার্যকর পদক্ষেপ।

নন-এমপিও শিক্ষকরা বলছেন, “আমাদের আন্দোলন কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়। এটি শুধুমাত্র শিক্ষার উন্নতি এবং শিক্ষকদের অধিকার রক্ষার জন্য। আমরা চাই শিক্ষকরা মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারেন এবং ছাত্ররা মানসম্মত শিক্ষা পায়।”

সমাজে প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনায় সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া এসেছে। অনেকে শিক্ষক সমাজের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছেন এবং সরকারের কাছে ন্যায্য পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “শিক্ষকদের দীর্ঘ আন্দোলন শিক্ষার মান এবং সামাজিক ন্যায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশি সহিংসতা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি আন্দোলন নয়, এটি শিক্ষার মান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অধিকার এবং মানবিক ন্যায়ের প্রতি দেশের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করছে। নন-এমপিও শিক্ষকদের আন্দোলন এখনো চলমান, এবং সরকারের পদক্ষেপ শিক্ষাক্ষেত্রে স্থায়ী পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।

MAH – 13709 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button