যশোর জেলার শার্শা উপজেলায় একটি স্থানীয় সালিশকে কেন্দ্র করে তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার উলাশী ইউনিয়নের লাউতাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে, যেখানে ওয়ার্ড জামায়াত সভাপতি জহুরুল ইসলামসহ অন্তত ১০ জন গুরুতর আহত হন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আহতদের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, হামলার সূত্রপাত ঘটে মাছ ধরার ঘুনি বা ফাঁদকে কেন্দ্র করে। গ্রামের যুবক ইমরান (২৭) এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুসের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ইমরান ইউনুসকে ধাক্কা দিলে বিষয়টি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই ঘটনা নিয়ে রাতের দিকে গ্রামের সালিশ বৈঠক বসানো হয়।
সালিশ বৈঠকে উত্তেজনা বৃদ্ধি
স্থানীয়রা জানান, সালিশের সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্ড জামায়াত সভাপতি জহুরুল ইসলাম (৫০)। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ইমরানকে ইউনুসের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তবে ইউনুসপক্ষের লোকজন এই সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ অনুযায়ী, ক্ষমা চাওয়ার প্রক্রিয়ার সময়ই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
হামলার ঘটনার বিবরণ
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ক্ষিপ্ত ইউনুসপক্ষ ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তারা ইমরান এবং জহুরুল ইসলামকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। হামলার সময় পরিবারের সদস্যরাও এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও আক্রমণ করা হয়।
আহতদের নাম জানা গেছে। তারা হলেন:
- জহুরুল ইসলাম (৫০)
- ইমরান (২৭)
- নুর মোহাম্মদ (৭৩)
- কদর আলী (৫০)
- হেলাল (২৮)
- সালমা (৩৪)
- রানু (২৫)
আহতদের চিৎকার শুনে আশপাশের মানুষ ছুটে এসে তাদের উদ্ধার করেন এবং শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। মেডিকেল সূত্রে জানা যায়, ছয়জনের অবস্থা গুরুতর, তাদেরকে বিশেষ নজরদারির অধীনে রাখা হয়েছে।
পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলীম সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার খবর শুনেছি। “আমরা তদন্ত শুরু করেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং সম্ভাব্য সাক্ষীরাও প্রশ্ন করা হচ্ছে।
গ্রামে উত্তেজনা ও নিরাপত্তা
স্থানীয়রা জানান, হামলার পর গ্রামে ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ নিরাপদে চলাফেরা করতে পারছে না। অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে বাড়ির বাইরে বের হতে সাহস পাচ্ছেন না। শার্শা থানার পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন ধরনের স্থানীয় সংঘর্ষ প্রায়শই সালিশ বা ব্যক্তিগত বিবাদের কারণে শুরু হয়। কিন্তু অস্ত্রের ব্যবহার পরিস্থিতি মারাত্মক করে তোলে। তারা সতর্ক করেছেন, প্রশাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে এমন ঘটনা পুনরায় ঘটতে পারে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এবং সামাজিক সংগঠনগুলোও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা হামলাকারীদের শাস্তির দাবি করেছেন এবং শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে এবং অনেকেই এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয়দের বক্তব্য
একজন স্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, “এই ধরনের ঘটনায় সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত এবং শাস্তি প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি।” অন্য একজন স্থানীয়রা জানান, সালিশে হামলা সাধারণত কম দেখা যায়, কিন্তু এখানে রাজনৈতিক প্রভাবও রয়েছে।
স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা পরিস্থিতি
শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন চিকিৎসকরা জানান, গুরুতর আহতদের অবস্থা এখনও স্থিতিশীল নয়। হাসপাতালের বেড এবং জরুরি বিভাগের অবস্থা বর্তমানে চাপের মধ্যে রয়েছে। তারা আরও জানান, আহতদের মধ্যে দু-তিনজনকে বড় শহরের হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রয়োজন হতে পারে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যেই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে। তারা হামলাকারীদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছেন। এছাড়া, স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলাকায় দীর্ঘমেয়াদি শান্তি বজায় রাখতে স্থানীয় কমিউনিটি লিডারদের সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। পাশাপাশি, সালিশ এবং পারিবারিক বিবাদের সমাধানকে আরও নিয়ন্ত্রিত এবং সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করা জরুরি।
যশোরের শার্শা উপজেলার লাউতাড়া গ্রামের এই ঘটনা প্রমাণ করে, সালিশ বা স্থানীয় বিবাদে তুচ্ছ বিষয়কেও বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। শান্তি ও সহমর্মিতার মাধ্যমে সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব। প্রশাসন এবং স্থানীয় কমিউনিটির সক্রিয় পদক্ষেপ ছাড়া, এমন ঘটনা পুনরায় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
MAH – 13704 I Signalbd.com



