পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাহসী নেতৃত্বে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত থামানো সম্ভব হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, সেই সাহসী পদক্ষেপের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় বড়সড় যুদ্ধের ঝুঁকি এড়ানো গেছে এবং লাখ লাখ মানুষ প্রাণে বেঁচেছেন।
শনিবার (৮ নভেম্বর) আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য আসে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরেন, যেভাবে ট্রাম্প সংলাপ ও কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনা সম্ভব করেছেন।
ট্রাম্পের কূটনৈতিক ভূমিকা
শাহবাজ শরিফের বক্তব্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধির সময় ট্রাম্প সক্রিয়ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা নিয়েছিলেন। পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ট্রাম্পের সাহসী নেতৃত্বের কারণে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত থামানো সম্ভব হয়েছে। সেই পদক্ষেপের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। যা না হলে সম্ভাব্য বড় যুদ্ধের জন্য লাখ লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে থাকত।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব এবং সাহসী কূটনৈতিক পদক্ষেপ বিশ্বের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে। এটি দেখাচ্ছে যে, প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শক্তিশালী কূটনীতি ও সাহসী সিদ্ধান্তই শান্তি নিশ্চিত করতে পারে।”
ভারতের অবস্থান
যদিও পাকিস্তান ট্রাম্পের পদক্ষেপকে প্রশংসা করছে, ভারতের পক্ষ থেকে সেই হস্তক্ষেপকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ট্রাম্প একাধিকবার দাবি করেছিলেন যে তার পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে, তবে ভারত তা অস্বীকার করেছে। ভারতের কূটনৈতিক সূত্র বলেছে, “আমরা নিজস্ব পরিকল্পনা এবং কৌশলের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। আন্তর্জাতিক নেতাদের হস্তক্ষেপের দাবি সমর্থনযোগ্য নয়।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সবসময়ই জটিল এবং সেনাসংক্রান্ত উত্তেজনা, সীমান্ত বিরোধ এবং কূটনৈতিক চাপের মধ্যে মিশে থাকে। এমন সময় বিদেশি নেতৃত্বের ভূমিকা মাঝে মাঝে পরিস্থিতি শান্ত করতে সাহায্য করে, যা শাহবাজ শরিফের বক্তব্যেও প্রতিফলিত হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির গুরুত্ব
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাস জটিল। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে সীমান্ত বিরোধ, কাশ্মীর সমস্যা এবং মাঝে মাঝে সামরিক সংঘাত এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হিসেবে বিবেচিত।
শাহবাজ শরিফের বক্তব্যে উঠে এসেছে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সক্রিয় কূটনীতি এবং সরাসরি পদক্ষেপের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করা হয়েছে। এর গুরুত্ব আমরা কখনোই অবহেলা করতে পারি না।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বাকুতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অন্যান্য আন্তর্জাতিক নেতারাও দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি প্রসঙ্গে গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ করে ট্রাম্পের কূটনৈতিক পদক্ষেপের প্রশংসা বিভিন্ন কূটনৈতিক পর্যায়ে লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাহসী নেতৃত্ব শুধু ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কেই নয়, বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ঘটনা ও প্রেক্ষাপট
মে মাসে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সীমান্তে উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছায়। সেখানকার সেনা সংঘর্ষ এবং রকেট হামলার কারণে দুই দেশের মধ্যে সীমান্তে অবস্থানরত মানুষ এবং সেনারা বিপদে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি ভারত ও পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।
পাকিস্তান সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্পের সরাসরি উদ্যোগ এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার কারণে সীমান্ত সংঘর্ষ স্থগিত হয়। এটি কেবল আঞ্চলিক শান্তিই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার স্থায়ী শান্তি প্রক্রিয়ার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।
বিশ্লেষক মন্তব্য
বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের সাহসী পদক্ষেপ কখনও কখনও জাতীয় স্বার্থের চেয়ে বৃহত্তর মানবিক দায়িত্বকে প্রাধান্য দেয়। শাহবাজ শরিফের বক্তব্য সেই দিককে তুলে ধরে যে, একটি সাহসী কূটনৈতিক পদক্ষেপ লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে।
একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন, “শাহবাজ শরিফের এই বক্তব্য শুধু ট্রাম্পের প্রশংসা নয়, এটি দেখাচ্ছে যে, সংকটকালীন মুহূর্তে সাহসী নেতৃত্ব এবং কূটনৈতিক উদ্যোগ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভবিষ্যতের জন্যও একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ।”
শাহবাজ শরিফের বাকুতে দেওয়া বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং সাহসী নেতৃত্ব কেবল কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য নয়, বরং সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষার জন্যও অপরিহার্য। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি এবং স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক সমাজের সামনে তুলে ধরেছেন এবং এটি দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
MAH – 13702 I Signalbd.com



