রমজান মাসকে মুসলমানদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে গণ্য করা হয়। পবিত্র রমজান মাসে মুসলমানরা সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত রোজা রাখেন, বেশি ইবাদত ও দান-সদকা করেন। ২০২৬ সালের রমজান ও ঈদ সম্পর্কে আগেই আগ্রহ প্রকাশ করছে সারা বিশ্ব। ইসলাম ধর্ম বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ইসলামিক ইনফরমেশন’ সম্প্রতি জানিয়েছে, আগামী বছরের রমজান শুরু হতে এখন মাত্র ১০০ দিন বাকি।
রমজান ২০২৬ কখন শুরু হতে পারে
২০২৬ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রমজান শুরু হতে পারে ১৯ ফেব্রুয়ারি। সে অনুযায়ী, ২০ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) থেকে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতে রোজা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই বিষয়ে আমিরাতের জ্যোতির্বিদ্যা সংস্থা, এমিরেট অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটি-এর চেয়ারম্যান ইব্রাহিম আল জারওয়ান গালফ নিউজকে জানান, “১৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যপ্রাচ্যে ১৪৪৭ হিজরি সনের রমজানের চাঁদ আকাশে দেখা যাবে। তবে সূর্যাস্তের মাত্র এক মিনিট পর চাঁদটি অস্ত হয়ে যাবে। ফলে এটি খালি চোখে দেখা সম্ভব হবে না। তাই রমজান শুরু হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি।”
রমজানের রোজার সময়কাল
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রমজানের প্রথম দিকে প্রায় ১২ ঘণ্টা রোজা রাখার নিয়ম থাকবে। মাস যত এগোবে, রোজার সময়কাল ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে এবং শেষের দিকে ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত পৌঁছাবে। এটি আবহাওয়া ও ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করবে।
বাংলাদেশে রোজার সময়কাল প্রথম দিকে ১১–১২ ঘণ্টার মধ্যে থাকবে, যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, রমজান মাসের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করতে চাঁদ দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মধ্যপ্রাচ্য ও বাংলাদেশের রমজান সূচি
সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়া জানিয়েছে, আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের চাঁদ দেখা কমিটি বৈঠকে বসবে। সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পর বাংলাদেশে রোজা ও ঈদ শুরু হয়। সে অনুযায়ী, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের রমজান শুরু হতে পারে ২০ ফেব্রুয়ারি, আর ঈদুল ফিতর ২১ মার্চ উদযাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রমজান মাসের গুরুত্ব
রমজান মাসে মুসলমানরা ইবাদত ও দানের প্রতি বেশি মনোযোগ দেন। সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত রোজা রাখার পাশাপাশি দান, কোরআন তেলাওয়াত ও নফল নামাজে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রমজান কেবল শারীরিকভাবে ক্ষুধা ও তৃষ্ণা সহ্য করার মাস নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, আত্মসংযম ও মানবিক দায়িত্ব পালন করার মাস। এই মাসে দান-সদকা ও মানবিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়।
রোজা শুরু ও চাঁদ দেখা
রমজান শুরু করার আগে চাঁদ দেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামী ক্যালেন্ডার চাঁদ মাস ভিত্তিক। তাই চাঁদ দেখা বা ‘হিলাল’ আবির্ভাবের মাধ্যমে রমজানের প্রথম দিন নির্ধারণ করা হয়।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চাঁদ দেখা গেলে, একদিন পর সাধারণত বাংলাদেশসহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো রমজান পালন শুরু করে। চাঁদ দেখা কমিটি রমজানের সূচি ঘোষণা করার আগে আকাশ পর্যবেক্ষণ ও জ্যোতির্বিদ্যার তথ্য বিবেচনা করে।
২০২৬ সালে রমজান ও ঈদুল ফিতর
২০২৬ সালের রমজান মাস ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা থাকায়, বাংলাদেশে ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে রোজা শুরু হতে পারে।
- প্রথম রোজা: ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৬
- শেষ রোজা ও ঈদুল ফিতর: ২১ মার্চ, ২০২৬
এই সময় মুসলমানরা সেহরি ও ইফতারের সময় মেনে রোজা পালন করবেন। ইফতারির সময় সূর্যাস্তের সাথে মেলে, যা দিনপঞ্জিকাভিত্তিক নির্ধারিত।
রমজান মাসে সাধারণ নিয়মাবলি
১. সেহরি: রোজা শুরু করার আগে সেহরি খাবার গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
২. ইফতার: সূর্যাস্তের সময় ইফতার করা হয়।
৩. নফল নামাজ: রাতের নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াত এই মাসে বেশি পড়া হয়।
৪. দান-সদকা: দরিদ্র ও দু:খী মানুষের জন্য দান করা উত্তম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রমজান মাসে সেহরি ও ইফতার স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পালন করলে শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা বজায় থাকে।
রমজান মাসের মানসিক ও সামাজিক প্রভাব
রমজান কেবল ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি সামাজিকভাবে মানুষকে একত্রিত করার মাধ্যমও। পরিবার, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে ইফতার, দোয়া ও নফল নামাজের মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।
এছাড়া, রমজান মাসে দান-সদকা ও স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মাসে মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পায়।
রমজান ও প্রযুক্তি
বর্তমানে চাঁদ দেখা ও রোজার সূচি ঘোষণা করতে প্রযুক্তি ও জ্যোতির্বিদ্যার সমন্বয় ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি বিশেষত শহরাঞ্চল ও দূরবর্তী অঞ্চলে রমজান শুরু করার সময় নির্ধারণে সহায়ক।
২০২৬ সালের রমজান মাস বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য বিশেষ হয়ে উঠবে। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে পারে রোজা, আর ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে ২১ মার্চ। এই মাসে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি, ইবাদত ও দান-সদকার মাধ্যমে মুসলমানরা ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে সমৃদ্ধ হবেন।
MAH – 13701 I Signalbd.com



