বিশ্ব

মালয়েশিয়ায় পাচারকালে নৌকাডুবি, বাংলাদেশিসহ ছয় জন উদ্ধার

Advertisement

মালয়েশিয়ার জলসীমায় অবৈধভাবে দেশ ভ্রমণ করা অভিবাসীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে গেছে। এই নৌকায় প্রায় ৯০ জন যাত্রী ছিলেন। এই দুর্ঘটনায় এক রোহিঙ্গা নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার রাতের এই দুর্ঘটনার খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে।

কেদাহ পুলিশের প্রধান আবু শাহ জানিয়েছেন, এই যাত্রীরা প্রায় ৩০০ জনের একটি বড় দলের অংশ। তিন দিন আগে তারা মালয়েশিয়ার জলসীমার কাছে পৌঁছালে অভিবাসী পাচার সিন্ডিকেট তাদের তিনটি ছোট নৌকায় ভাগ করে দেয়। প্রতিটি নৌকায় প্রায় ৯০ জন করে যাত্রী ছিল।

ডুবির শিকার হওয়া নৌকা সম্পর্কে তিনি জানান, “৯০ জন যাত্রী বহনকারী একটি নৌকা ডুবে গেছে। তবে অন্যান্য দুটি নৌকা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিলিতভাবে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছি।”

উদ্ধার হওয়া ছয়জনের মধ্যে মিয়ানমারের নাগরিক রয়েছেন, যাদের মধ্যে রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশিরাও অন্তর্ভুক্ত। আবু শাহ আরও জানান, “নৌকা ডুবির শিকারদের এবং বাকি দুটি নৌকার অবস্থান খুঁজে বের করার জন্য মালয়েশিয়ান মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি এবং মেরিন পুলিশ উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।”

অবৈধ অভিবাসনের ঝুঁকি

মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসী প্রবেশের ঘটনা নতুন নয়। প্রতিবছর বহু মানুষ উচ্চ প্রত্যাশা নিয়ে দেশের বাইরে যায়, কিন্তু অনেকেই ঝুঁকি এড়াতে বা নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে পারেন না। অবৈধ নৌকাযোগে যাত্রা করার সময় যাত্রীদের শারীরিক নিরাপত্তা, খাদ্য ও পানির অভাব, এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সীমান্তবর্তী দেশগুলোর কঠিন পরিস্থিতির কারণে প্রায়শই এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় নেমে পড়ে।

উদ্ধারের প্রচেষ্টা

মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিখোঁজদের খুঁজে বের করার জন্য সমুদ্রসীমায় সার্চ অপারেশন চালানো হচ্ছে। মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি এবং নৌবাহিনী একযোগে তল্লাশি চালাচ্ছে।

স্থানীয় সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোও নিহত ও নিখোঁজদের পরিবারদের সহায়তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আহত ও অসুস্থদের জন্য অস্থায়ী শিবিরে চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।

মানবপাচার সিন্ডিকেটের কৌশল

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধ অভিবাসী পাচার সিন্ডিকেটরা প্রায়শই তাদের শিকারদের চাপিয়ে দেয় ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ নৌকায়। তিনটি নৌকায় ভাগ করার মাধ্যমে তারা ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করে না, বরং বৃহৎ সংখ্যক মানুষের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে ডুবির ঘটনা ঘটে।

অভিবাসী পাচার একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ, যা মানবিক ও সামাজিক ঝুঁকি তৈরি করে। বিশেষত শিশু, নারী ও অসহায় মানুষরা এই ধরনের দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় শিকার হয়।

বাংলাদেশি অভিবাসীর ঝুঁকি

উদ্ধার হওয়া ছয়জনের মধ্যে কিছু বাংলাদেশি রয়েছে। এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা প্রায়শই অর্থনৈতিক সঙ্কট বা নিরাপত্তাহীনতার কারণে ঘটে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই ধরনের যাত্রা কোনোভাবেই নিরাপদ নয় এবং অবৈধ নৌকা ব্যবহার করলে প্রাণহানির সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি।

সমাধানের দিকনির্দেশনা

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসন রোধ করা যায়। সীমান্তে সঠিক তদারকি, অভিবাসীদের নিরাপদ নিয়মিত ভ্রমণের সুযোগ, এবং পাচার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ অপরিহার্য।

মালয়েশিয়ার সমুদ্রসীমায় নিয়মিত নৌকাডুবি এবং উদ্ধার অভিযান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে। এটি দেখায়, মানবপাচারের শিকাররা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়েন।

সংক্ষিপ্ত বিবরণ

  • স্থান: মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্ত
  • নৌকা যাত্রী: প্রায় ৯০ জন
  • উদ্ধার: ৬ জন (মিয়ানমার ও বাংলাদেশি নাগরিক)
  • মৃতদেহ: এক রোহিঙ্গা নারী
  • উদ্ধার অভিযান: চলমান, নিখোঁজদের খোঁজ চলছে
  • সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ: মালয়েশিয়ান মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট, মেরিন পুলিশ

এ ধরনের ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি সতর্কবার্তা। এটি দেখায়, অভিবাসন মানবিক ও সামাজিক সমস্যা ছাড়াও জীবননাশের ঝুঁকি বহন করে।

MAH – 13689 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button