নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো, নগর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে মুদি দোকান, বিনামূল্যে গণপরিবহন এবং শিশু পরিচর্যা ব্যবস্থার মতো প্রগতিশীল নীতি চালিয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমাজতান্ত্রিক প্রার্থী জোহরান মামদানি নির্বাচিত হয়েছেন।
তাঁর এই প্রগতিশীল কর্মসূচি থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী ২৬ জন ধনকুবের ও ধনী পরিবার তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় ২ কোটি ২০ লাখ ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করেছেন।
ধনকুবেরদের বিপুল অর্থায়ন
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, জোহরানের প্রতিদ্বন্দ্বীকে সহায়তার জন্য উল্লেখযোগ্য দাতাদের মধ্যে ছিলেন ব্লুমবার্গ এলপির সহপ্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ব্লুমবার্গ, হেজ ফান্ড ম্যানেজার বিল অ্যাকম্যান, এয়ারবিএনবির সহপ্রতিষ্ঠাতা জো গেবিয়া এবং এস্টি লডারের উত্তরাধিকারী লডার পরিবারের সদস্যরা। প্রত্যেকে কমপক্ষে ১ লাখ ডলার করে অনুদান দিয়েছেন।
মাইকেল ব্লুমবার্গ একাই প্রাইমারিতে কুমোকে সহায়তার জন্য ৮.৩ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেন। বিল অ্যাকম্যান ১.৭৫ মিলিয়ন ডলার এবং লডার পরিবার ৭.৫ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন। অনুদানের অর্ধেকেরও বেশি অর্থ প্রাইমারির আগে আসে। অন্য বড় দাতাদের মধ্যে ছিলেন নেটফ্লিক্সের সহপ্রতিষ্ঠাতা রিড হেস্টিংস এবং গণমাধ্যম উদ্যোক্তা ব্যারি ডিলার।
রক্ষণশীল দাতারাও এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ক্যাসিনো ব্যবসায়ী স্টিভ উইন ৫ লাখ ডলার এবং তেল ব্যবসায়ী জন হেস কয়েক মাসে ১০ লাখ ডলার অনুদান দেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় ধনকুবেরদের ভূমিকা
ফোর্বস জানিয়েছে, এই ২৬ জন কোটিপতির মধ্যে ১৬ জনই নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দা। জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে প্রচারণা পরিচালনার অর্থ দিয়ে তাঁরা আশা করছিলেন যে প্রগতিশীল নীতির প্রার্থী হেরে যাবেন। তবে ভোটের ফলাফলে দেখা গেল, বিপুল অর্থের চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁরা সফল হননি।
জোহরান এক জনসভায় বলেন, “বিল অ্যাকম্যান এবং রোনাল্ড লডারের মতো ধনকুবেরেরা লাখ লাখ ডলার ব্যয় করেছেন কারণ তাঁরা মনে করেন, আমরা তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছি। আমি স্বীকার করছি, তাঁরা ঠিকই বলছেন।”
মামদানি-বিরোধী প্রচারণায় অর্থদাতা ছিলেন কারা?
• মাইকেল ব্লুমবার্গ : ৮.৩ মিলিয়ন ডলার
• জো গেবিয়া : ৩ মিলিয়ন ডলার
• উইলিয়াম লডার ও পরিবার : ২.৬ মিলিয়ন ডলার
• বিল অ্যাকম্যান : ১.৭৫ মিলিয়ন ডলার
• জোনাথন টিশ ও তার পরিবার : ১.২ মিলিয়ন ডলার
• জন হেস : ১ মিলিয়ন ডলার
• ড্যানিয়েল লোব : ৭.৭৫ লাখ ডলার
• ব্যারি ডিলার : ৫ লাখ ডলার
• স্টিভ উইন : ৫ লাখ ডলার
• মার্সেলা গুয়ারিনো হাইমোভিটজ : ৪ লাখ ডলার
• ডেভিড ওয়ালেন্টাস : ৩.৫ লাখ ডলার
• রিড হেস্টিংস : ২.৫ লাখ ডলার
• জন ফিশ : ২.৫ লাখ ডলার
• ডেভিড লিশটেনস্টাইন : ২.৫ লাখ ডলার
• অ্যালিস ওয়ালটন : ২ লাখ ডলার
• ডেবোরা সাইমন : ২ লাখ ডলার
• জেরি স্পিয়ার : ১.৫ লাখ ডলার
• স্টেফানি কোলম্যান : ১.৫ লাখ ডলার
• ডার্স্ট পরিবার : ১.১ লাখ ডলার
• ফিশার পরিবার : ১.১ লাখ ডলার
• ড্যানিয়েল ওচ : ১ লাখ ডলার
• কেন ল্যাংগোন : ১ লাখ ডলার
• জেমস ও ক্যাথরিন মারডক : ১ লাখ ডলার
• ব্রুস ও সুজি কোভনার : ১ লাখ ডলার
• রিচার্ড কার্টজ : ১ লাখ ডলার
• এলঘানায়ান পরিবার : ১ লাখ ডলার
জয়ের পর সমর্থনের ইঙ্গিত
মামদানির জয় নিশ্চিত হওয়ার পর, কিছু প্রভাবশালী ধনকুবের তাঁর প্রতি সমর্থনের প্রস্তাব দিয়েছেন। অ্যাকম্যান এক্সে পোস্ট করে লিখেছেন, “এখন আপনার একটি বড় দায়িত্ব আছে। আমি নিউইয়র্ক সিটিকে সাহায্য করতে পারি, আমাকে জানাবেন কী করতে পারি।”
জেপি মরগান চেজের সিইও জেমি ডিমন বলেন, “মামদানিকে সাহায্য করতে আমি প্রস্তুত। যদি এটি ফলপ্রসূ মনে হয়, তবে আমি তা চালিয়ে যাব। যেকোনো মেয়র বা গভর্নরকে সহায়তা করার জন্য আমি প্রস্তুত।”
নির্বাচনের প্রেক্ষাপট
জোহরান মামদানির প্রগতিশীল নীতি নিউইয়র্ক সিটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। বিনামূল্যে গণপরিবহন, শিশু পরিচর্যা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা বিশেষভাবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। ফলে, অর্থের প্রভাবকে পাশ কাটিয়ে জনগণের ভোটে বিজয়ী হন তিনি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জোহরান মামদানি ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নিউইয়র্ক সিটির মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তাঁর লক্ষ্য আগামী চার বছরে নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়ন, নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
২৬ জন ধনকুবেরের কোটি কোটি ডলারও জনমতের শক্তিকে থামাতে পারেনি। জোহরান মামদানির জয় প্রমাণ করছে, সৎ এবং প্রগতিশীল নেতৃত্বের বিপক্ষে অর্থশক্তিও অবশ্যম্ভাবী নয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ফলাফল ভবিষ্যতের নির্বাচনে সমান শক্তিশালী রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্য এক উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে।
এম আর এম – ২১৪২,Signalbd.com



