বিশ্ব

কারাগার কক্ষে টিভি ও পছন্দের খাবার, রয়েছে মোবাইলও

Advertisement

ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দিদের জন্য প্রদত্ত বিশেষ সুবিধা নিয়ে বিতর্ক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর একটি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দিদের কক্ষে টিভি, মোবাইল এবং পছন্দের খাবারের সুবিধা থাকা দেখা গেছে। ভিডিওতে বন্দিরা টিভি দেখছেন, মোবাইলে কথা বলছেন এবং আরাম করছে, যা দেশজুড়ে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।

ভিডিও ভাইরাল, বন্দিদের আরামদায়ক জীবন প্রকাশ্যে

বেঙ্গালুরুর আগরাহারা কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের দুই বন্দি, কোন্ডারু রাজু এবং উমেশ রেড্ডি, ভিডিওতে দেখা গেছে কক্ষে আরাম-আয়েশে অবস্থান করছেন। ভিডিওতে তাদের মোবাইলে কথা বলা, টিভি দেখা এবং পছন্দের খাবার খাওয়া স্পষ্টভাবে দেখা যায়। ঘটনায় কারা বিভাগের ডিজি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর কারাগার কর্তৃপক্ষের প্রতি সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি সামনে আসার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং কারারক্ষীরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।

কারাগারে বিশেষ সুবিধার পেছনের কারণ

ভারতের কারা বিভাগ জানায়, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং ভিআইপি বন্দিদের মাঝে কিছু ব্যক্তি ডিভিশনপ্রাপ্ত হিসেবে বিশেষ সুবিধা ভোগ করতে পারতেন। এই সুবিধার মধ্যে ছিল এসি, বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার, টিভি এবং মোবাইল ফোন। তবে, অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে অথবা নিয়ম ভেঙে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা ধরা পড়লে ডিভিশন বাতিল করা হয়।

বিতর্কিত বন্দিদের পরিচিতি

সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গরমের সময় এসি এবং বাড়ি থেকে খাবার আনার জন্য আবদার করেছিলেন। এছাড়া, সাবেক সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ ও রাজশাহীর এমপি এনামুল হকও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা চাইলে তাদের ডিভিশন বাতিল করা হয়।

বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে, এই বন্দিরা চোর-ডাকাত, মাদক ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য সাধারণ বন্দিরা যেখানে নিয়মিত কারাগারের খাবার এবং সুবিধা পান, সেখানে তারা অতিরিক্ত সুবিধার চেষ্টা করছিলেন। কারা মহাপরিদর্শক জানান, “কারাবিধি অনুযায়ী কোনো বন্দি যদি অবৈধ সুবিধা বা ডিভাইস ব্যবহার করে, তবে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হয়।”

কারাগারে সুবিধা ও বন্দির মনোভাব

ভিডিও ও সংবাদ অনুযায়ী, বন্দিরা আরামদায়ক পরিবেশে থাকার জন্য মোবাইল ব্যবহার ও টিভি দেখার সুযোগ নিচ্ছেন। এছাড়া তাদের পছন্দের খাবারও সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে, কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, এই ধরনের সুবিধা নিয়ম অনুসারে সীমিত এবং অনিয়ম বা অতিরিক্ত দাবির কারণে শাস্তি বা ডিভিশন বাতিল করা হয়।

একাধিক বন্দি জানান, “যদি কারাবিধি মেনে সুবিধা না দেওয়া হয়, তবে আমরা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করি। তবে এটি কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করা হয়।”

প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া ও তদন্ত

কারা বিভাগের ডিজি, বি দয়ানন্দ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে ভিডিওতে প্রদর্শিত সুবিধাগুলোর প্রকৃততা যাচাই করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, বিশেষ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে।

স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে বন্দিদের বিশেষ সুবিধা প্রদান ও মনিটরিং আরও কড়াকড়ি করা হবে। এই ধরনের ঘটনা কারাগারের নিরাপত্তা এবং সাধারণ বন্দিদের সুযোগ-সুবিধার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

সামাজিক ও নৈতিক প্রভাব

ভিআইপি বন্দিদের বিশেষ সুবিধা প্রদানের বিষয়টি সমাজে সমানাধিকারের প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারাগারের ভিতরে সকল বন্দিকে সমানভাবে ব্যবস্থা প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি। সামাজিক ন্যায্যতা এবং কারারক্ষীদের সততা নিশ্চিত করা না হলে বন্দিদের মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি পাবে।

এক বিশেষ আইনজ্ঞ মন্তব্য করেন, “কারাব্যবস্থায় কোনো ব্যক্তিকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করলে তা আইন ও ন্যায়ের সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত। নয়তো সমাজে অসাম্য ও অসন্তোষ সৃষ্টি হবে।”

বেঙ্গালুরুর এই ভিডিও এবং ভারতের অন্যান্য কারাগারের পরিস্থিতি দেখিয়ে দেয়, বন্দিদের বিশেষ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে নিয়ম এবং নজরদারি অপরিহার্য। আইন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা যথাযথ না হলে কারাগারে অসাম্য এবং বিতর্ক আরও গভীর হতে পারে। ভবিষ্যতে কারা কর্তৃপক্ষের মনিটরিং ও কড়াকড়ি নিশ্চিত করতে হবে যেন সকল বন্দি সমানাধিকারভিত্তিক সেবা পান।

এম আর এম – ২১৩৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button