রাজনীতি

৪ হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে জামায়াত নেতার শোডাউন

Advertisement

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জে শক্তি প্রদর্শন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতৃত্ব। শনিবার সকালে প্রায় চার হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন করেছেন দলটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে জামায়াতের মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে এই শোডাউনের নেতৃত্ব দেন তিনি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।

শোডাউনের সূচনা ও রুটম্যাপ

শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ গেট থেকে শুরু হয় এই বিশাল মোটরসাইকেল শোডাউন। প্রায় চার হাজার মোটরসাইকেলে অংশ নেন জামায়াতের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। শোডাউনটি শহরের নিউমার্কেট, বিশ্বরোড, শান্তিমোড়, ঝিলিম রোডসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে শোভাযাত্রাটি পৌরসভা চত্বরে এসে শেষ হয়।

শোডাউনের পুরো পথজুড়ে অংশগ্রহণকারীদের স্লোগান, পতাকা ও ব্যানারে ভরে যায় এলাকা। শহরজুড়ে যান চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হলেও পরিস্থিতি ছিল নিয়ন্ত্রণে। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য।

নুরুল ইসলাম বুলবুলের বক্তব্য

শোডাউন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তৃতা দেন নুরুল ইসলাম বুলবুল। তিনি বলেন, “আমরা শাসক নয়, জনগণের সেবক হতে চাই। আগামী দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে নতুনভাবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করবো, ইনশাআল্লাহ। আমরা উন্নয়নের রাজনীতি করতে চাই, বিভেদের নয়।” তিনি আরও বলেন, “এই জনসমর্থনই প্রমাণ করে, জনগণ পরিবর্তন চায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ ন্যায়, নীতি ও সুশাসনের পক্ষে।”

তার বক্তব্যের সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য লতিফুর রহমান, জেলা জামায়াতের আমির আবু জার গিফারী, সেক্রেটারি আবু বক্কর, সদর উপজেলা আমির হাফেজ আব্দুল আলিম, পৌর আমির হাফেজ গোলাম রাব্বানীসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ ও উদ্দীপনা

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকেই শহর ও আশপাশের গ্রাম থেকে মোটরসাইকেলযোগে নেতাকর্মীরা এসে জড়ো হতে থাকেন নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে। অনেকে নিজেদের ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে উপস্থিত হন। শোডাউনকে ঘিরে তরুণ কর্মীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়। তাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘদিন পর এমন বড় আকারের রাজনৈতিক কর্মসূচি এলাকায় নতুন উদ্দীপনা তৈরি করেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনটি রাজনৈতিকভাবে সব সময় আলোচিত একটি এলাকা। অতীতে এই আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতও প্রভাব বিস্তার করেছে। বিশেষ করে নুরুল ইসলাম বুলবুল দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্থানীয় পর্যায়ে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত ছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, এই শোডাউন দলটির সংগঠন পুনর্গঠনের ইঙ্গিত বহন করছে। নির্বাচন সামনে রেখে এটি হতে পারে মাঠপর্যায়ে শক্তি পরিমাপের একটি উদ্যোগ।

প্রশাসনের ভূমিকা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বৃহৎ আকারের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা হওয়ায় প্রশাসন পূর্ব থেকেই সতর্ক ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোতায়েন ছিলেন। জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, “রাজনৈতিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”

বিশ্লেষণ: নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জেও আসন্ন নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি জামায়াতও এখন মাঠে সক্রিয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের শোডাউন ভবিষ্যৎ নির্বাচনী সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের মনোভাবের ওপর।

একজন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “জামায়াত দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ে তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি নড়বড়ে হয়নি। এই শোডাউন প্রমাণ করে, তারা এখনো মাঠে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জে জামায়াত নেতার এই শোডাউন রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন কর্মসূচি রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে আগামী দিনে এই জনসমর্থন ভোটে কতটা রূপ নেবে, তা এখনই বলা কঠিন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হবে।

এম আর এম – ২১৩৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button