বানিজ্য

করাচি–চট্টগ্রাম সরাসরি শিপিং শুরু করলো পাকিস্তান ও বাংলাদেশ

Advertisement

পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আঞ্চলিক বাণিজ্য সহযোগিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এগিয়েছে। দুই দেশ করাচি ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু করেছে। নতুন এই শিপিং পরিষেবা কেবল ব্যবসায়িক খরচ কমাবে না, পাশাপাশি পণ্য সরবরাহের সময়ও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে।

পাকিস্তানের গণমাধ্যম সামা টিভি শুক্রবার প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই উদ্যোগ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও লজিস্টিক ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করবে।

সরাসরি শিপিং সুবিধা: সময় ও খরচ উভয়ই কমছে

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জাতীয় পরিষদে জমা দেওয়া এক লিখিত জবাবে জানান, নতুন শিপিং পরিষেবার মাধ্যমে পণ্য সরবরাহের সময় ২৩ দিন থেকে কমে মাত্র ১০ দিনে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, এটি দুই দেশের মধ্যে লজিস্টিক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যিক ব্যয় হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশ তার বন্দরগুলোতে পাকিস্তানি রপ্তানির জন্য ১০০% পরিদর্শনের বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছে। এই পদক্ষেপ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে কার্যকর হয়েছে। দার বলেন, এটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সহজীকরণের একটি বড় অগ্রগতি।

দ্বিপাক্ষিক আস্থা বৃদ্ধি এবং পণ্য প্রবাহের সুবিধা

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, এই নতুন উদ্যোগ দুই দেশের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং কাস্টমস প্রক্রিয়ায় বিলম্ব কমাবে। ফলে পণ্য প্রবাহ আরও নির্বিঘ্নভাবে চলবে। এটি বিশেষভাবে ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের জন্য বড় সুবিধা হবে।

যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠক

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক ২৭ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধির বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দুই দেশই ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও গভীর করার অঙ্গীকার করেছে।

চাল রপ্তানিতে নতুন চুক্তি

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির আওতায় পাকিস্তান ২০০,০০০ মেট্রিক টন চাল রপ্তানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে ইতিমধ্যে ৫০,০০০ মেট্রিক টন চাল বাংলাদেশে সরবরাহ করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই কাঠামোর আওতায় আগামী মাসগুলোতেও নিয়মিত চাল সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।

পাকিস্তানি কোম্পানির অংশগ্রহণে বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ

দারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০-এর বেশি পাকিস্তানি কোম্পানি ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ও বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোতে অংশ নিয়েছে। এতে বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও উৎপাদন খাতে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ আরও জোরদার হয়েছে। এই মেলায় দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় সরাসরি বিনিয়োগ ও সহযোগিতার সুযোগ পেয়েছে।

বিমান চলাচলের নতুন সুযোগ

শিপিং পরিষেবার পরিপূরক হিসেবে দুই দেশ সরাসরি বিমান চলাচল শুরু করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই দুইটি পাকিস্তানি বেসরকারি বিমান সংস্থাকে ঢাকা–করাচি রুটে ফ্লাইট চালুর অনুমতি দিয়েছে। বর্তমানে ফ্লাইটের সময়সূচী ও সরবরাহ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, এসব উদ্যোগ ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং পর্যটন খাতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি এটি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করবে।

ব্যবসায়িক খাতে প্রভাব

এই সরাসরি শিপিং পরিষেবা ব্যবসায়ীদের জন্য বড় সুবিধা প্রদান করবে। পণ্যের দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ার কারণে ব্যবসায়িক চেইন আরও দক্ষ হবে। এতে আমদানি ও রপ্তানির খরচ কমবে, লজিস্টিক ব্যবস্থায় সময়ও বাঁচবে। বিশেষ করে খাদ্য, টেক্সটাইল, কৃষি ও প্রস্তুত পণ্যের ক্ষেত্রে এই সুবিধা গুরুত্বপূর্ণ।

আঞ্চলিক বাণিজ্য সহযোগিতায় নতুন দিগন্ত

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করাচি-চট্টগ্রাম সরাসরি শিপিং আঞ্চলিক বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এটি কেবল দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে।

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের এই উদ্যোগ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। নতুন শিপিং ও বিমান চলাচল সুবিধা, দ্রুত পণ্য সরবরাহ, কম খরচ এবং ব্যবসায়িক সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দুই দেশ বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছে।

MAH – 13681 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button