স্বাস্থ্য

ডেঙ্গু আক্রান্তে একদিনে হাসপাতালে ভর্তি ৮৩৪ রোগী

Advertisement

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই বাড়ছে। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে দেশে ৮৩৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে আনন্দের বিষয় হলো, এই একদিনে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি।

এই তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের শনিবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি হাসপাতাল ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৬৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০৩ জন, ঢাকা বিভাগের সিটি কর্পোরেশন এলাকাবহির্ভূত অংশে ২২৯ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২০৩ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৬০ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের সিটি কর্পোরেশন এলাকাবহির্ভূত অংশে ৭২ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

চলতি বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত দেশে মোট ৭৭,৩৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ে মৃতের সংখ্যা ৩০৭ জনে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই বছর বর্তমানে ৭৩,৭৮৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণগুলো যেমন জ্বর, মাথা ব্যথা, পিঠে ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরের দুর্বলতা, মলমূত্রে পরিবর্তন, ত্বকে র‍্যাশ ইত্যাদি অবহেলা করা চলবে না। এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

বিভাগের ভিত্তিতে ভর্তি পরিস্থিতি

  • বরিশাল বিভাগ: ১৬৭ জন
  • চট্টগ্রাম বিভাগ: ১০৩ জন
  • ঢাকা বিভাগ (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে): ২২৯ জন
  • ঢাকা উত্তর সিটি: ২০৩ জন
  • ঢাকা দক্ষিণ সিটি: ৬০ জন
  • ময়মনসিংহ বিভাগ (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে): ৭২ জন

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঢাকার বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনে বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ এলাকায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি মূলত শহরের জনসংখ্যা ঘনত্ব এবং আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত ও পানি জমার কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যার হঠাৎ বৃদ্ধির ফল।

রোগ প্রতিরোধ ও সচেতনতা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে কিছু সাধারণ কিন্তু কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন:

  1. মশারি ব্যবহার করুন: ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  2. পানি জমা না রাখুন: বাসা বা আশেপাশে খোলা পানি জমা না রাখার চেষ্টা করুন।
  3. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: বাড়ি ও আশেপাশের এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।
  4. ডেঙ্গু পরীক্ষা: জ্বর, র‍্যাশ, মাথাব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করুন।
  5. ডাক্তারের পরামর্শ: সন্দেহ হলে নিজে কোনো ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে ডাক্তার দেখান।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, ডেঙ্গু ভাইরাস মূলত এডিস মশা মারফত ছড়ায়। এডিস মশা দিনের বেলা সক্রিয় থাকে। তাই দিনে বাইরে গেলে দীর্ঘ হাত ও পায়ের কাপড় পরা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে মশা প্রতিরোধক ব্যবহার করা জরুরি।

অতীতের তুলনায় ২০২৫ সালের পরিস্থিতি

গত বছরের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ১,০১১,২১৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং মোট ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়।

অপরদিকে ২০২৩ সালে দেশের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ ছিল। ওই বছর মোট ৩,২১,১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ১,৭০৫ জনের মৃত্যু হয়।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডেঙ্গু মোকাবিলায় সময়মতো সচেতনতা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাম্প্রতিক হাসপাতাল তথ্য

গত একদিনে ৮১৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছর হাসপাতাল থেকে মোট ছাড়পত্রপ্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ৭৩,৭৮৫। এটি প্রমাণ করে যে, সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতার মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগীদের বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।

ডেঙ্গুর সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করেছেন যে, এডিস মশা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া এবং ডেঙ্গুর ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সবাইকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পরিচ্ছন্নতা, মশারি ব্যবহার ও পানি জমা না রাখার মতো সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পাশাপাশি যদি জ্বর বা অন্যান্য ডেঙ্গু লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা শুধুমাত্র সরকারের দায়িত্ব নয়, জনগণকেও সক্রিয়ভাবে সচেতন হতে হবে। সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

MAH – 13680 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button