চলতি বছরের শেষ প্রান্তে এসে দেশের সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এসেছে এক সুখবর। ডিসেম্বরের শেষ দিকে তারা পাচ্ছেন একটানা তিন দিনের ছুটি। সরকারি ছুটির ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, বছরের শেষ বড় উৎসব বড়দিন এবং তার পরের সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে এই বিরল সুযোগটি আসছে তাদের জন্য।
এ বছর এখনো দুই মাসেরও বেশি সময় বাকি, তবে ডিসেম্বরের ছুটির সময়সূচি দেখে অনেকেই ইতিমধ্যে ছুটি পরিকল্পনা করতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে যাদের পরিবার রাজধানীর বাইরে, তাদের জন্য এটি ঘরে ফেরার এক দারুণ সুযোগ হয়ে উঠবে।
ডিসেম্বরের ছুটির তালিকা: তিন দিন একসাথে বিশ্রাম
সরকারি ছুটির ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে রয়েছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ ছুটি।
- ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) — মহান বিজয় দিবস
- ২৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) — যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন বা বড়দিন
বড়দিনের ছুটি বৃহস্পতিবার পড়ায় এর পরের দিন শুক্রবার (সাপ্তাহিক ছুটি) এবং শনিবার যুক্ত হয়ে চাকরিজীবীরা উপভোগ করতে পারবেন টানা তিন দিনের ছুটি — ২৫, ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর।
এই তিন দিনের বিরতি বছরের শেষ দিকে অফিসের ব্যস্ততা থেকে সাময়িক মুক্তি এনে দেবে অনেকের জীবনযাত্রায় এক স্বস্তির পরশ। অনেকেই এই সময়টায় পরিবার নিয়ে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন — কেউ যাচ্ছেন সমুদ্র সৈকতে, কেউবা নিজ গ্রামের বাড়িতে প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটাতে।
চলতি বছরের বাকি ছুটি
সরকারি ছুটির ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে আর কোনো সাধারণ বা নির্বাহী ছুটি নেই। অর্থাৎ ডিসেম্বরের আগে সরকারি কর্মীদের আর কোনো নির্ধারিত ছুটির সুযোগ নেই।
এ কারণেই বড়দিনের এই তিন দিনের ছুটিকে অনেকে বছরের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত সময় হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে বছরজুড়ে অফিসের চাপ, দাপ্তরিক কাজের ক্লান্তি শেষে এই দীর্ঘ সপ্তাহান্ত যেন সবার জন্য এক মিষ্টি অবকাশ।
২০২৬ সালের সরকারি ছুটি: অনুমোদন পেল নতুন তালিকা
এদিকে, আগামী বছরের অর্থাৎ ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকাও অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রেস সচিব জানান, ২০২৬ সালের ছুটির তালিকায় মোট ২৮ দিনের সরকারি ছুটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে ৯ দিন শুক্র ও শনিবারের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় কার্যত ছুটি থাকবে ১৯ দিন।
এছাড়া, নির্বাহী আদেশে প্রদত্ত বিশেষ ছুটি ও সাধারণ ছুটি মিলিয়ে তালিকাটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ছুটির ধরন কী কী?
বাংলাদেশে সরকারি ছুটি সাধারণত তিনটি ভাগে বিভক্ত —
- সাধারণ ছুটি (General Holiday)
যেমন— স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ, বড়দিন ইত্যাদি। - নির্বাহী আদেশে ছুটি (Executive Order Holiday)
সরকার চাইলে বিশেষ পরিস্থিতিতে এ ধরনের ছুটি ঘোষণা করতে পারে। - ঐচ্ছিক ছুটি (Optional Holiday)
বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য নির্ধারিত হয়। যেমন— হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য আলাদা ঐচ্ছিক ছুটি থাকে।
২০২৬ সালের ছুটির তালিকায় এই তিন ধরনের ছুটিই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
২০২৬ সালের সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ ছুটিগুলো
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৬ সালে যেসব দিনে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ছুটি পড়তে পারে সেগুলো হলো—
- ১ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) — নববর্ষ
- ২১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) — আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
- ১৭ মার্চ (মঙ্গলবার) — জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন
- ২৬ মার্চ (বুধবার) — স্বাধীনতা দিবস
- ১ মে (শুক্রবার) — শ্রমিক দিবস
- ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) — মহান বিজয় দিবস
- ২৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) — বড়দিন
এর বাইরে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, বুদ্ধপূর্ণিমা, আশুরা, জন্মাষ্টমী, দুর্গাপূজা ও অন্যান্য ধর্মীয় দিবস অনুযায়ী তারিখ নির্ধারণ করা হবে চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে।
দীর্ঘ ছুটিতে ভ্রমণ পরিকল্পনায় ব্যস্ত নাগরিকরা
ছুটি মানেই বিশ্রাম ও আনন্দ। বছরের শেষ প্রান্তে টানা তিন দিনের ছুটি অনেক পরিবারকে উৎসাহিত করেছে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনায়।
ভ্রমণ-বিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ও ট্যুর এজেন্সিগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, বান্দরবান, সিলেট ও সুন্দরবনের জন্য বুকিং বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
একই সঙ্গে অনেকেই গ্রামের বাড়িতে ফেরার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল ও বাস কাউন্টারগুলোতেও সেই সময় ভিড় বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারি দপ্তরগুলোতে ছুটির আগে ব্যস্ততা
ছুটি মানেই সরকারি দপ্তরগুলোতে বাড়তি ব্যস্ততা। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই বিভিন্ন অফিসে দেখা যায় ফাইলপত্র গুছানোর, বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরির ও পর্যালোচনার কাজ।
বছরের শেষ দিকের এই সময়টিতে প্রায় সব দপ্তরেই থাকে কর্মচাপের ভিড়। তাই বড়দিনের টানা ছুটিকে ঘিরে অনেকেই ছুটি শুরুর আগেই কাজ শেষ করতে চাইছেন।
ছুটির সঠিক ব্যবহার: বিশ্রাম, পরিবার ও নিজেকে সময় দিন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছুটি শুধু ভ্রমণ বা বিনোদনের জন্য নয়; এটি মানসিক পুনরুজ্জীবনের একটি সুযোগ। বছরের শেষে এই সময়টিকে সঠিকভাবে কাজে লাগালে নতুন বছরে কর্মস্পৃহা ও মনোযোগ অনেক বেড়ে যায়।
পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, বই পড়া, প্রিয় শখে সময় দেওয়া বা স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুক্ত হওয়া— এসবও হতে পারে ছুটিকে অর্থবহ করে তোলার সুন্দর উপায়।
২০২৫ সালের শেষ দিকে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এই টানা তিন দিনের ছুটি নিঃসন্দেহে এক আনন্দঘন খবর। বড়দিনের সঙ্গে যুক্ত সাপ্তাহিক ছুটি তাদের এনে দেবে বছরের এক প্রশান্ত বিরতি।
একই সঙ্গে ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকাও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ হওয়ায় আগামী বছরের পরিকল্পনা করতেও সুবিধা হবে সকলের।
অর্থাৎ, বছরের শেষে এই ছুটিই হতে পারে নতুন বছরের আগমনী আনন্দের সূচনা।
MAH – 13679 I Signalbd.com



