গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় একটি তুলার গুদামে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে টঙ্গী স্টেশন রোডের মিলগেট এলাকায় গুদামে আগুন লেগে যায়। ঘটনাস্থলে দ্রুত সাড়া দিয়ে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুনের সূত্রপাতের সঙ্গে সঙ্গে কালো ধোঁয়া পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের লোকজন প্রথমে নিজেরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তুলার গুদামে আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে সাধারণ মানুষ তা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হননি। পরে স্থানীয়রা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন জানান, “আমাদের ৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। যদিও এখনো পুরোপুরি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি, তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো মানুষের জীবন ও আশপাশের স্থাপনা নিরাপদ রাখা।”
আগুনের কারণ এবং প্রাথমিক তদন্ত
এ ধরনের তুলার গুদামে আগুন লাগার পিছনে সাধারণত বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা তেল-রোগানের মতো আগ্নেয়গুপ্ত পদার্থ থেকে আগুন ছড়ানোই মূল কারণ হয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিস মনে করছে, বৈদ্যুতিক লাইন থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে আগুনের সঠিক কারণ জানা যাবে।
এলাকার মানুষের ভয়ের অভিজ্ঞতা
প্রত্যক্ষদর্শী রফিকুল ইসলাম জানান, “আগুনের ধোঁয়া এত ঘন ছিল যে আশপাশের রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি কোথা থেকে আগুন লেগেছে। পরে স্থানীয়রা দ্রুত ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়।”
অন্য এক স্থানীয় বাসিন্দা শামীম বলেন, “এই এলাকায় অনেক গুদাম রয়েছে। আগুন ছড়িয়ে পড়লে খুব দ্রুত ক্ষতি হতে পারে। সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত পদক্ষেপ না হলে আমরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হতাম।”
ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গুদামে আগুন নেভাতে ৭টি ইউনিট কাজ করছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি ইউনিট সরাসরি আগুনে নিপাতের জন্য এবং অন্য ইউনিটগুলো আশপাশের এলাকা সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি যাতে আগুন আর অন্য গুদাম বা আশপাশের ঘরে ছড়াতে না পারে।”
আশপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশও ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন। তারা আশপাশের এলাকা খালি করিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে কাজ করতে সহায়তা করছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আগুনের কারণে কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
গাজীপুর জেলা ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন আরও বলেন, “আমরা জনগণকে পরামর্শ দিচ্ছি, এমন পরিস্থিতিতে কেউ গুদামের কাছে না গিয়ে নিরাপদ দূরত্বে থাকুক। আগুন নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত কেউ এলাকা থেকে বের হবেন না।”
আগুনের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি
তুলার গুদামে আগুন লাগলে শুধু মালামালই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং যানবাহনেরও ঝুঁকি থাকে। এছাড়া এই ধরনের আগুনে ধোঁয়া এবং কার্বন মনোক্সাইডের কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্থানীয় চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আগুনের কাছাকাছি অবস্থান করলে দ্রুত ধোঁয়া দ্বারা শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা এবং চোখে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা
ফায়ার সার্ভিস আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করছে। হাই-প্রেশার ওয়াটার হোস, ফোম, এবং কেমিক্যাল সরঞ্জাম দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। অভিজ্ঞ দমকলকর্মীরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আগুন নেভানোর কাজ করছেন।
ভবিষ্যৎ সতর্কতা ও প্রস্তুতি
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মনে করান, “এ ধরনের আগুন প্রতিরোধে নিয়মিত গুদামে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করা, আগ্নেয়গুপ্ত পদার্থ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা এবং জরুরি প্রস্থান পথ সব সময় খোলা রাখা অত্যন্ত জরুরি।”
প্রতিবেদনকারীর পর্যবেক্ষণ
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, আগুন এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে নি। কালো ধোঁয়া এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে এবং আশপাশের মানুষজন আতঙ্কিত। তবে ফায়ার সার্ভিসের সক্রিয় পদক্ষেপে আশেপাশের বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
শনিবার দুপুর টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় তুলার গুদামে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট কাজ করছে। আশপাশের মানুষজন নিরাপদ দূরত্বে রয়েছে এবং প্রশাসন আগুন নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটই সম্ভবত আগুন লাগার কারণ।
MAH – 13675 I Signalbd.com



