ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ করেছে, যেখানে ফোনে অশ্লীল বার্তা পাঠানোর মতো অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশে ফোন বা অনলাইন মাধ্যমে অশ্লীল বা অশোভন বার্তা প্রেরণের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড এবং দেড় কোটি টাকা জরিমানা আরোপ করা হতে পারে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া সম্প্রতি প্রকাশ করেছে। খসড়াটি সাধারণ মানুষের মতামতের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশের মূল ধারাসমূহ
ধারা ৬৯ অনুযায়ী, ফোন, মেসেজ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অশ্লীল, ভীতিকর, অপমানজনক বা অশোভন বার্তা, ছবি বা ভিডিও প্রেরণ করা হলে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া যেতে পারে। গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে।
ধারা ৭০ অনুযায়ী, কাউকে যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া বারবার ফোন করে বিরক্ত করলেও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এর জন্য এক লাখ টাকা জরিমানা বা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড ধার্য করা হয়েছে।
বেআইনিভাবে আড়ি পাতা বা কুপ্রচেষ্টা চালানোও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ধরা হবে।
অনলাইন ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ
খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সকল ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা যেমন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন মেসেজিং অ্যাপ এবং ভিডিও স্ট্রিমিং সেবা সরকারের অনুমোদনের আওতায় আসবে। এসব প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে নিরাপত্তা সংস্থাকে তথ্য সরবরাহ করতে হবে।
এছাড়া অনুমতিহীনভাবে টেলিযোগাযোগ সেবা বা বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কমিশন
অধ্যাদেশের খসড়া অনুযায়ী, টেলিযোগাযোগ খাতে একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কমিশন’ গঠিত হবে।
কমিশনের দায়িত্বসমূহ হলো:
- লাইসেন্স প্রদান
- নীতিনির্ধারণ
- স্পেকট্রাম বণ্টন
- প্রযুক্তিগত মান নিয়ন্ত্রণ
পাঁচ সদস্যের কমিশনের একজন হবেন চেয়ারম্যান ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান।
সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ
খসড়া অধ্যাদেশটি সাধারণ মানুষের মতামতের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। মতামত দেওয়ার শেষ তারিখ ১৫ নভেম্বর।
মতামত ই-মেইলে পাঠানো যাবে [email protected] অথবা ডাকযোগে সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা ঠিকানায়।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে আইন প্রণয়নে স্বচ্ছতা আনা হবে।
বিশ্লেষণ ও প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অশ্লীলতা ও দুর্ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আসবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত কুপ্রচেষ্টা কমে যাবে।
একইসাথে, এটি টেলিযোগাযোগ খাতে স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি করবে। তবে আইন প্রয়োগে কঠোরতা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
প্রযুক্তি ও নিরাপত্তার সমন্বয়
নতুন অধ্যাদেশের আওতায় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে তথ্য শেয়ার করতে হবে। এতে সামাজিক যোগাযোগ ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার সুরক্ষার সঙ্গে ভারসাম্য রাখা অপরিহার্য।
ফোনে বা অনলাইন মাধ্যমে অশ্লীল বার্তা পাঠানো, বেআইনিভাবে আড়ি পাতা বা অনাকাঙ্ক্ষিত বার্তা প্রেরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ধরা হবে। নতুন অধ্যাদেশ কার্যকর হলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দায়িত্বশীল ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।
এখন দেখার বিষয়, সাধারণ মানুষ ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এই বিধানগুলোতে কতটা সচেতনভাবে চলতে পারবে।
এম আর এম – ২১৩০,Signalbd.com



