জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ কম্পাউন্ডে চুক্তি লঙ্ঘন করে প্রায় ৯০০ ইসরাইলি প্রবেশ করেছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদ কম্পাউন্ডে ইসরাইলি বাহিনীর সুরক্ষায় একদিনে প্রায় ৯০০ ইসরাইলি প্রবেশ করেছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এই প্রবেশকে চুক্তি লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করছে। আল-আকসা মসজিদ ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান এবং এটি দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত।
ঘটনার বিস্তারিত
জেরুজালেম গভর্নরেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম্পাউন্ডে প্রবেশকারী প্রায় ৯০০ ইসরাইলি প্রবেশ করেছে ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর নিরাপত্তা সুরক্ষায়। আল-আকসা কম্পাউন্ডের ধর্মীয় ও প্রশাসনিক দায়িত্ব ইসলামী ওয়াকফ কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে।
১৯৬৭ সালের পরেও ‘স্ট্যাটাস কু’ চুক্তি অনুযায়ী ইসলামি ওয়াকফ মসজিদের প্রশাসন চালায় এবং ইসরাইল কম্পাউন্ডের চারপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। চুক্তির ভিত্তিতে মুসলমানরা পূর্ণ স্বাধীনতায় নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে অমুসলিমরা নির্ধারিত সময় ছাড়া প্রবেশ বা প্রার্থনা করতে পারেন না।
আল-আকসা মসজিদ একই স্থানে ইহুদিদের পবিত্র টেম্পল মাউন্ট হিসেবেও পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরেই এটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু।
ফিলিস্তিনি সংবাদসংস্থা ওয়াফার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেম দখল করার পর থেকে কম্পাউন্ডে সীমিত প্রবেশ এবং নতুন স্থাপনা নির্মাণ কার্যক্রমকে চালু রাখছে। এতে ইসলামি স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের উপর সরাসরি হুমকি তৈরি হচ্ছে।
ইসরায়েলের পরিকল্পনা ও ফিলিস্তিনি অভিযোগ
ফিলিস্তিনি প্রশাসনের উপদেষ্টা মারুফ আল রিফাই অভিযোগ করেছেন, ইসরাইল কম্পাউন্ডের নিচে সুড়ঙ্গ খনন করে ইসলামি স্থাপত্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তারা এই স্থানের মাধ্যমে জেরুজালেমের আরব-ইসলামি চরিত্র মুছে ফেলার পরিকল্পনা করছে।
জেরুজালেম প্রশাসন জানায়, সুড়ঙ্গগুলোকে ইহুদি পর্যটন ও ধর্মীয় স্থানে রূপান্তর করা হচ্ছে। এতে মসজিদের স্থাপত্যিক স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক নীতির ওপর হতাশা প্রকাশ করেছেন। জাতিসংঘও ইসরাইলের এই পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চাপ সৃষ্টি করলে ইসরাইল সাময়িকভাবে কার্যক্রম স্থগিত করতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে সেখানে স্থায়ী পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা চলছে।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ ও ঐক্য
ইসরাইলি পদক্ষেপের জবাবে ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস এবং ফাতাহের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। মধ্যস্থতায় কায়রোতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে গাজার বর্তমান পরিস্থিতি, ভবিষ্যতের যুদ্ধবিরতি এবং জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ, যেখানে দুই বছরের আগ্রাসনের পর উপত্যকার তিন-চতুর্থাংশ ভবন ধ্বংস হয়েছে। ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ প্রায় ৬১ মিলিয়ন টন।
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আল-আকসা কম্পাউন্ডে ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ জেরুজালেমে ইহুদিকরণের একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ। ধর্মীয় ও স্থাপত্যিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়ছে।
ফিলিস্তিনি জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ কতটা কার্যকর হবে তা সময়ই দেখাবে। তবে সাম্প্রতিক ঘটনার আলোকে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
এম আর এম – ২১২৯,Signalbd.com



