অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া। নতুন আইনে গুম করার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ বৃহস্পতিবার গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের মাধ্যমে গুমের সমস্ত প্রকার অপরাধ দমন এবং ভুক্তভোগীর অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।
অধ্যাদেশের মূল বক্তব্য
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে জানান, নতুন অধ্যাদেশে গুম করার অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। অধ্যাদেশে গোপন আটক কেন্দ্র বা আয়নাঘর নামে পরিচিত স্থাপনা ব্যবহারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থা যদি এমন স্থাপনা স্থাপন বা ব্যবহার করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এছাড়া ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ, আইনি সহায়তা এবং পরিচয় সুরক্ষার বিষয়ে বিশেষ বিধান সংযোজন করা হয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা
অধ্যাদেশে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে (এনএইচআরসি) গুম সম্পর্কিত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া অধ্যাদেশে গঠিত ট্রাইব্যাল নিশ্চিত করবে যে অভিযোগ গ্রহণের পর ১২০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন হবে।
শফিকুল আলম বলেন,
“এই আইন কার্যকর হলে দেশে আর কোনো সরকার গুমের রাজত্ব চালাতে পারবে না। এটি মানবাধিকার সুরক্ষা এবং ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করবে।”
বাংলাদেশে গুম সংক্রান্ত ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। বিভিন্ন সময়ে গোপন আটক কেন্দ্রের ব্যবহার এবং নাগরিকদের নিখোঁজ হওয়া বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৃষ্টিকোণ আকর্ষণ করেছে।
এর আগে এ ধরনের অভিযোগ তদন্তের জন্য আলাদা গুম কমিশন গঠনের প্রস্তাব থাকলেও, এবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী ক্ষমতা প্রদান করে কার্যকর ব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে।
আইনের প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গুম প্রতিরোধ আইন বাস্তবায়িত হলে নাগরিকদের জীবন, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দৃঢ় প্রভাব ফেলবে। আইনটি গোপন বা অনিয়মিত কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ দেবে।
রাজনৈতিক ও মানবাধিকার কর্মীরা প্রশংসা করেছেন এই উদ্যোগকে। বিশেষ করে ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা এবং আইনি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার সুরক্ষার একটি কার্যকর কাঠামো তৈরি হবে।
সামাজিক ও মানবাধিকার দিক
আইনটি শুধু শাস্তি আর অপরাধ নির্ধারণে সীমাবদ্ধ নয়। এতে ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন, নিরাপদ পরিবেশ, ক্ষতিপূরণ এবং মানসিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
এটি দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আইন কার্যকর হলে সাধারণ নাগরিক এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে শক্তিশালীভাবে অভিযোগ জানাতে সুবিধা হবে।
বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞ মতামত
রাজনৈতিক ও মানবাধিকার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গুম প্রতিরোধ আইন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একজন বিশ্লেষক জানান, “আইনটি প্রয়োগ করা হলে কোনো সরকার বা ব্যক্তি সহজে গুমের ঘটনায় জড়াতে পারবে না। এটি সমাজে বিশ্বাসযোগ্যতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।”
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, আইনের কার্যকর প্রয়োগের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যাল এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সক্ষমতা মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে।
গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন বাংলাদেশের মানবাধিকার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ। গুমের জন্য মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তি আরোপ এবং ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের ন্যায়বিচার ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইনটি কার্যকর হলে এটি ভবিষ্যতে সরকারের দায়িত্বশীলতা এবং নাগরিক অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এম আর এম – ২১২৫,Signalbd.com



