আঞ্চলিক

সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় জেলা কৃষকদল নেতা কারাগারে

Advertisement

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তিন সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনকে আদালত কারাগারে প্রেরণ করেছে।

ফতুল্লার গিরিধারা এলাকায় এক নারী জমি দখলের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে জেলা কৃষকদলের নেতা শাহাদাত হোসেন ও তার অনুসারীদের হামলার শিকার হন তিনজন সাংবাদিক। তাদের উপর হামলা ও ক্যামেরা, মোবাইল ভাঙচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামিকে বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত

বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে সাংবাদিকরা স্থানীয় সংবাদ সংগ্রহের জন্য ফতুল্লার গিরিধারা এলাকায় পৌঁছান। অভিযোগ অনুযায়ী, শাহাদাত হোসেন ও তার অনুসারীরা সাংবাদিকদের বাধা দেন এবং একের পর চড়-থাপ্পড় শুরু করেন। হামলায় জাগো নিউজের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা প্রতিনিধি মো. আকাশ, নিউজ নারায়ণগঞ্জের ক্যামেরাম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সহকারী আয়াজ রেজা গুরুতর আহত হন।

হামলাকারীরা সাংবাদিকদের একটি কক্ষে আটকে রাখেন এবং তাদের ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন ভাঙচুর করেন। প্রায় দুই থেকে তিন ঘন্টা আটকে রাখার পর স্থানীয়রা খবর পেয়ে আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করে খানপুর ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান।

আদালতের নির্দেশ

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে পুলিশ শাহাদাত হোসেনকে নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুদ্দিন কাদির তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আসামিকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার পরবর্তী ধার্য্য তারিখে রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।”

মামলার পরিপ্রেক্ষিত

হামলার ঘটনায় সাংবাদিক মো. আকাশ বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে করা হয়েছে জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন ও সায়েদাবাদী শহীদকে। এছাড়া ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার গিরিধারা বউবাজার এলাকায় এক নারীর জমি দখল করার ঘটনায় স্থানীয় নেতা শাহাদাত ও তার অনুসারীরা তিন সাংবাদিকের ওপর হামলা চালান।

আহত সাংবাদিকদের অবস্থা

হামলায় গুরুতর আহত সাংবাদিকরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মো. আকাশ জানান, হামলাকারীরা সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে মারধর করার পাশাপাশি ক্যামেরা ও মোবাইল ফোনও ভাঙচুর করে। আহতদের অবস্থার কারণে স্থানীয় সংবাদ সংগ্রহ কার্যক্রমে কিছু সময় ব্যাঘাত ঘটে।

স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, সাংবাদিকরা বেশ কিছু মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন, তবে তাদের জীবন সংকটাপন্ন নয়।

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা

এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। সাংবাদিক সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ ধরনের হামলা স্থানীয় গণমাধ্যমের উপর চাপে ফেলার একটি স্পষ্ট উদাহরণ। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।

পুলিশ ও প্রশাসনের পদক্ষেপ

ফতুল্লা থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্ত শাহাদাতকে আটক করে। পুলিশ জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
পরিদর্শক কাইউম খান বলেন, “আমরা মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করছি এবং সব ধরনের তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের ঘটনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থানীয় নেতাদের দ্বারা সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা দেশের তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

ফতুল্লায় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কারাগারে প্রেরিত হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। তবে সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো আশা করছেন, দ্রুত এবং স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হবে।
এ ধরনের ঘটনা পুনরায় না ঘটাতে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এম আর এম – ২১২৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button