আঞ্চলিক

ডেঙ্গু কেড়ে নিল আরও ৫ প্রাণ, হাসপাতালে ভর্তি ১,০৩৪ জন

Advertisement

দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কমছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৫ জনের মৃত্যু ও ১,০৩৪ জনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৩০৭ জনে।

ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সর্বশেষ তথ্য

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ১,০৩৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে তিনজন ঢাকা বিভাগের এবং দুজন অন্যান্য বিভাগের বাসিন্দা। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫,৬৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী।

চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৭৬ হাজার ২৬ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৩০৭ জনের।

বিভাগভিত্তিক আক্রান্তের সংখ্যা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৭১ জন নতুন রোগী। ঢাকা বিভাগের অন্য জেলাগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১৮৮ জন।

অন্যদিকে বরিশাল বিভাগে ১৩৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০৩ জন, খুলনা বিভাগে ৫৫ জন, ময়মনসিংহে ৬৬ জন, রাজশাহীতে ৭৯ জন, রংপুরে ৩৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ৫ জন নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষা শেষ হলেও মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে ব্যর্থতা এবং আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশের কারণে আক্রান্তের হার এখনও কমছে না।

পূর্ববর্তী বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতির তুলনা

২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং মারা যান ৫৭৫ জন। তার আগের বছর ২০২৩ সালে পরিস্থিতি ছিল আরও ভয়াবহ; সে বছর ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং মৃত্যু হয়েছিল ১,৭০৫ জনের।

তুলনামূলকভাবে ২০২৫ সালে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও মৃত্যুহার এখনও উদ্বেগজনকভাবে বেশি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা ও বিশ্লেষণ

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে ডেঙ্গুর সংক্রমণ নগরকেন্দ্রিক হলেও ধীরে ধীরে তা গ্রামীণ এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ছে। জাতীয় ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সাবেক পরিচালক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ডেঙ্গু এখন আর মৌসুমি রোগ নয়; এটি সারা বছরই বিদ্যমান ঝুঁকি। তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “যেসব এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম দুর্বল, সেখানে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।”

প্রতিরোধ ও সচেতনতা জরুরি

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা। বিশেষজ্ঞদের মতে, পানি জমে থাকা ফুলের টব, টায়ার, ড্রাম, কনটেইনার ইত্যাদি পরিষ্কার না করলে সেখানে মশা ডিম দেয়।

সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি জনগণকেও ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখা এবং জমে থাকা পানি অপসারণে সচেতন হতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রস্তুত আছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ, জ্বর দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে এবং নিজে থেকে কোনো ওষুধ সেবন করা যাবে না।

সরকারি উদ্যোগ ও চলমান মনিটরিং

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগ যৌথভাবে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রতিদিন নিয়মিতভাবে মশা নিধন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. শারমিন আক্তার জানান, “ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতিটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে।”

জনগণের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ আশঙ্কা

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এখনো যদি সকলে একসাথে প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ না নেয়, তবে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে নতুন ঢেউ দেখা দিতে পারে।

ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “ডেঙ্গু দমনে একমাত্র পথ হলো সমন্বিত উদ্যোগ। শুধু সরকারি পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়; জনগণকে ঘরের ভেতর ও আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।”

দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। প্রতিদিন নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। তবে যথাযথ ব্যবস্থা ও জনসচেতনতা বাড়ানো গেলে সংক্রমণ কমানো সম্ভব বলে আশা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এম আর এম – ২১১৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button