বিশ্ব

পাকিস্তানে ৬৩৬ বিলিয়ন ডলারের স্বর্ণের মজুত আবিষ্কার

Advertisement

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের তারবেলা এলাকায় বিশাল স্বর্ণের মজুত শনাক্ত হয়েছে। পাকিস্তানের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে শুরু হয়েছে পরিকল্পনা।

ঘটনার বিস্তারিত

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের তারবেলা এলাকায় বিশাল পরিমাণ স্বর্ণের মজুত আবিষ্কারের খবর পাওয়া গেছে। দেশটির চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এয়ার করাচির চেয়ারম্যান হানিফ গহর সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জরিপে এই স্বর্ণের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৬৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ধরা হয়েছে, যা পাকিস্তানের সমস্ত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের জন্য যথেষ্ট। বিষয়টি ইতোমধ্যেই দেশটির বিশেষ বিনিয়োগ সহায়ক পরিষদস্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানকে জানানো হয়েছে।

স্বর্ণ উত্তোলনের পরিকল্পনা

হানিফ গহরের মতে, স্বর্ণ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু করতে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার কিছু খনির কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা চলছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন মিললেই তারবেলার মাটির নিচ থেকে স্বর্ণ উত্তোলনের কাজ শুরু হবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথেই স্বর্ণ উত্তোলনের প্রক্রিয়া কার্যকর হবে। এটি পাকিস্তানের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে। ২০২৫ সালের জুনে পাকিস্তানের মোট সরকারি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৮৬.৮৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। এই ঋণ দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতায় চাপ সৃষ্টি করছে।

এর আগে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা পাকিস্তানের জন্য নতুন খনিজ সম্পদের সম্ভাব্য গুরুত্ব নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। এখন, তারবেলা এলাকার স্বর্ণ মজুত এই দুশ্চিন্তার একটি সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

স্বর্ণের এই আবিষ্কার পাকিস্তানের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।

দেশটির অর্থমন্ত্রী বলেন, “এই আবিষ্কার পাকিস্তানের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচন করেছে। তবে দ্রুত এবং পরিকল্পিতভাবে উত্তোলন প্রক্রিয়া শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আশা প্রকাশ করেছেন, স্বর্ণ উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং অর্থনীতিতে বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

আন্তর্জাতিক খনিজ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিক বিশ্লেষণে মনে হচ্ছে এই মজুতটি উত্তোলনের জন্য যথেষ্ট বড়। তবে নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব খনন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা জরুরি।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বৈদেশিক ঋণ কমানো এবং অভ্যন্তরীণ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এই স্বর্ণ মজুত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তবে উত্তোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে কিনা, সেটিই মূল চ্যালেঞ্জ।

প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

সারাবিশ্বের বিনিয়োগকারীরা পাকিস্তানের এই স্বর্ণ আবিষ্কারের খবর নোটিশ করেছেন। কিছু আন্তর্জাতিক কোম্পানি ইতোমধ্যেই খনির জন্য প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে। তবে রাজনৈতিক ও আইনগত স্থিতিশীলতা ছাড়া তারা সরাসরি বিনিয়োগে আগ্রহী নয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তান যদি উত্তোলন প্রক্রিয়া কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে পারে, তাহলে এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি দূর করতে এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে অবস্থান শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের তারবেলা এলাকায় স্বর্ণের বিশাল মজুত আবিষ্কার পাকিস্তানের জন্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তবে উত্তোলন, বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা—all কিছুর জন্য সুপরিকল্পিত কৌশল প্রয়োজন। দেশের বৈদেশিক ঋণ হ্রাস, অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ—এসব বিষয়েই এখন দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত।

এম আর এম – ২১০৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button