বিশ্ব

পশ্চিম তীরে কৃষিখামারে হামলা, ৭ হাজার মুরগী হত্যা করলো ইসরাইলি বাহিনী

Advertisement

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কৃষিখামার লক্ষ্য করে ইসরাইলি সেনাদের হামলায় ৭ হাজার ডিমপাড়া মুরগী নিহত ও খামার ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার ফলে ফিলিস্তিনি কৃষকদের বড় ক্ষতি হয়েছে।

হামলার ঘটনা ও বিস্তারিত

জেনিনের পশ্চিমে উম্মে আল-রিহান নামে একটি গ্রামে ইসরাইলি সেনারা একটি মুরগির খামারে হামলা চালায়। এ সময় খামারের ৭ হাজার ডিমপাড়া মুরগিকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে হত্যা করা হয়। সেই সঙ্গে ১ হাজার বর্গমিটার (১০,৭৬৫ বর্গফুট) বিশিষ্ট খামারটিও ভেঙে ফেলা হয়।

খামারের মালিক জামাল কামেল জেইদ জানান, এতে তার আনুমানিক ৫ লাখ শেকেলেরও বেশি (১ লাখ ৩০ হাজার ডলার) ক্ষতি হয়েছে। গ্রাম পরিষদের প্রধান জানিয়েছেন, সামরিক যান ও একটি বুলডোজার দিয়ে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।

এছাড়া বেথলেহেমের পশ্চিমে ওয়াদি ফুকিনে ইসরাইলি সেনারা স্থানীয় কৃষকের একটি কৃষিখামার ভেঙে ফেলে। তাদের দাবি, এমন খামার নির্মাণের অনুমতি নেই।

ওয়াফার প্রতিবেদন মতে, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রামে ইসরাইলি সেনা ও অবৈধ সেটেলারদের হামলা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। এসব এলাকায় প্রতিনিয়ত হামলা, ভূমি দখল, অগ্নিসংযোগ ও ফসল লুটের ঘটনা ঘটছে।

ওয়াফা জানায়, মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) গভীর রাতে নাবলুসের দক্ষিণে ওয়াদি ইয়াসুফ এলাকায় ইসরাইলি সেটেলারদের বড় একটি দল সেনাবাহিনীর সহায়তায় ফিলিস্তিনিদের কৃষিজমিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ফিলিস্তিনিরা ক্ষয়ক্ষতি দেখতে যেতে চাইলেও তাদের বাধা দেয়া হয়।

গত সপ্তাহেও একই এলাকায় সেটেলাররা ইয়াসুফ ও ইসকাকা গ্রামের জমির ওপর নির্মিত অবৈধ কফার তাপুয়াহ বসতি থেকে একটি সড়ক নির্মাণ করে এবং ফিলিস্তিনিদের কৃষিজমি বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করে।

জেরুজালেমের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বেইত আনান শহরে নিজেদের জমিতে জলপাই সংগ্রহ করার সময় দুই ফিলিস্তিনি ভাইয়ের ওপর হামলা চালায় ইসরাইলি সেনারা। তাদের একজন আধান জামহুর জানান, সেনারা তাদের আটক করে, গাড়ি ও জলপাই ফসল বাজেয়াপ্ত করে এবং পরে কাছের সামরিক শিবির থেকে ছেড়ে দেয়।

রামাল্লাহর উত্তর-পশ্চিমে, আত্তারা শহরের আশপাশের ফিলিস্তিনি জমিতে হামলা চালিয়ে জলপাই চুরি করেছে ইসরাইলি সেটেলাররা। ওয়াফার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ বসতির দখলদাররা পূর্বাঞ্চলের মাঠ থেকে জলপাই কেটে নিয়ে যায়, অন্যদিকে কিছু সেটেলার ফিলিস্তিনিদের জমিতে গবাদিপশু চরায় ও একটি কূপের পানি চুরি করে নেয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জলপাই সংগ্রহ মৌসুমে ইসরাইলি সেটেলার ও সেনাবাহিনীর সহিংসতা ও ভূমি দখল বাড়ছে। প্রতিবছর এই মৌসুমে ফিলিস্তিনি কৃষকদের জমিতে প্রবেশে বাধা দেয়া হয় এবং হামলার ঘটনা বেড়ে যায়।

পশ্চিম তীরের অন্যান্য হামলা

ওয়াফা বার্তা সংস্থার প্রতিবেদনে জানা যায়, বেথলেহেমের পশ্চিমে ওয়াদি ফুকিনে ইসরাইলি সেনারা স্থানীয় কৃষকের অন্য একটি কৃষিখামারও ভেঙে দিয়েছে। তাদের দাবি, এসব খামার অবৈধভাবে নির্মিত।
এর আগে মঙ্গলবার গভীর রাতে নাবলুসের দক্ষিণে ওয়াদি ইয়াসুফ এলাকায় ইসরাইলি সেটেলারদের একটি দল সেনাবাহিনীর সহায়তায় ফিলিস্তিনিদের কৃষিজমিতে আগুন ধরায়। ফিলিস্তিনিরা ক্ষতি দেখতে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হয়।

পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রামে ইসরাইলি সেনা ও অবৈধ সেটেলারদের হামলার সংখ্যা সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এসব অঞ্চলে প্রতিনিয়ত ভূমি দখল, অগ্নিসংযোগ, ফসল লুট ও গবাদিপশু চুরির ঘটনা ঘটছে।

ফিলিস্তিনি কৃষকদের ক্ষতি ও উদ্বেগ

জেনিনের উম্মে আল-রিহান খামারের মালিক জামাল কামেল জেইদ জানান, খামারের সম্পূর্ণ বিনষ্ট হওয়ার কারণে তার জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
ফিলিস্তিনি কৃষকরা বলছেন, নিয়মিত হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ তাদের জীবিকার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ফসল ও প্রাণিজমির ওপর এ ধরনের হামলা তাদের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় বড় ধাক্কা দিয়েছে।

ইসরাইলি বাহিনীর বক্তব্য

ইসরাইলি সেনারা জানান, খামারগুলো অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছে। তাদের দাবি, খামার নির্মাণের আগে অনুমতি নেয়া হয়নি।
তারা বলছে, নিরাপত্তার কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে ফিলিস্তিনি কৃষকরা ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এটি তাদের সম্পদ ধ্বংস ও মানসিকভাবে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবাধিকার উদ্বেগ

ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি এ ধরনের হামলার সমালোচনা করেছে।
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিম তীরে চলমান এই ধরণের হামলা স্থানীয় কৃষকদের জীবিকার জন্য হুমকি।
মানবাধিকার সংস্থাগুলি ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে। তারা বলছে, ফিলিস্তিনি কৃষকদের জমিতে প্রবেশাধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত।

পরিস্থিতির সাম্প্রতিক ধারাবাহিকতা

রামাল্লাহর উত্তর-পশ্চিমে আত্তারা শহরের আশেপাশে জলপাই সংগ্রহের সময় ইসরাইলি সেটেলাররা হামলা চালিয়ে ফসল বাজেয়াপ্ত করেছে।
জেরুজালেমের উত্তর-পশ্চিমে বেইত আনান শহরের কৃষকদের জলপাই চুরি ও গবাদিপশু চুরির ঘটনা ঘটেছে।
এ ধরনের ঘটনা কৃষি মৌসুমে বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়, যা ফিলিস্তিনি কৃষকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে।

বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পশ্চিম তীরে এ ধরনের হামলা ফিলিস্তিনিদের জীবিকা ও কৃষি উৎপাদনকে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবিত করছে।
তাদের মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরদারি ছাড়া এ ধরনের পরিস্থিতি চলতে থাকবে।
এছাড়া, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর রিপোর্ট এ সমস্যার গুরুত্ব তুলে ধরছে, যা ভবিষ্যতে শান্তি আলোচনার প্রেক্ষাপটেও প্রভাব ফেলতে পারে।

পশ্চিম তীরে কৃষিখামার ধ্বংস ও ৭ হাজার মুরগী হত্যার ঘটনা শুধু ফিলিস্তিনি কৃষকদের নয়, গোটা অঞ্চলের কৃষি ও মানবিক পরিস্থিতির জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়।
এই হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে সমাধান না হলে ফিলিস্তিনি কৃষকরা প্রতিনিয়ত ক্ষতির মুখে থাকবে।
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও দৃষ্টিপাত জরুরি, যাতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

এম আর এম – ২১০২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button