রাজনীতি

ময়মনসিংহে ট্রেন আটকে মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর সমর্থকদের বিক্ষোভ

Advertisement

ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতা আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণের সমর্থকেরা ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনটি অবরোধ করে তারা। প্রায় ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে, ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

ঘটনাস্থলে বিক্ষোভ ও ট্রেন অবরোধের বিস্তারিত

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণায় ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পান দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণের সমর্থকেরা হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন।

তারা “হিরণ ভাইয়ের ন্যায়বিচার চাই”, “মনোনয়ন প্রত্যাহার করো” ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। অনেকে ট্রেনের সামনেই বসে পড়েন, কেউ কেউ রেলপথে শুয়ে অবরোধ তৈরি করেন। এতে নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ ও ঢাকার রেলযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

রেলওয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রায় আধা ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। সকাল প্রায় ১০টা ১০ মিনিটে ট্রেনটি পুনরায় ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

পুলিশের হস্তক্ষেপ ও প্রশাসনের ভূমিকা

গৌরীপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আক্তার হোসেন জানান, “বিক্ষোভকারীরা ট্রেনের সামনে অবস্থান নেওয়ায় সাময়িকভাবে রেল চলাচল ব্যাহত হয়। তবে আমরা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। অন্য লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল।”

তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয় এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

রেলওয়ে বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এ ধরনের হঠাৎ অবরোধে যাত্রীদের মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিশেষ করে অফিসগামী যাত্রীদের সময়মতো পৌঁছাতে সমস্যা হয়।

মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ

বিএনপি থেকে সম্প্রতি ঘোষিত মনোনয়ন তালিকায় গৌরীপুর আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইন। অথচ স্থানীয় পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ও জনপ্রিয় নেতা আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণের নামও আলোচনায় ছিল।

মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই গৌরীপুরে হিরণের সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। সোমবার সন্ধ্যায় তারা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।

স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, হিরণ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন দলের জন্য কাজ করেছেন। অথচ তাকে মনোনয়ন না দেওয়া “অন্যায় সিদ্ধান্ত” বলে তারা দাবি করেন।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়া

মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে পুনরায় বিক্ষোভ মিছিল করে গৌরীপুর পৌর বিএনপির সদস্যসচিব সুজিত কুমার বলেন, “দল যদি হিরণ ভাইকে মনোনয়ন না দেয়, তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। প্রয়োজনে হরতালের মতো আন্দোলনেও যাবো।”

একই প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হিরণের সহধর্মিণী সাইদা মাসরুর। তিনি বলেন, “আমার স্বামী দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে দলের জন্য কাজ করেছেন। আন্দোলনের সময় জেলে থেকেছেন। অথচ তাকে অবমূল্যায়ন করা হলো। দলের এই সিদ্ধান্ত আমাদের হৃদয় ভেঙেছে।”

এ সময় উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হিরণের পক্ষে স্লোগান দেন এবং মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।

ঘটনার প্রভাব ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

স্থানীয় রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের বিক্ষোভ বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে আরও প্রকট করে তুলতে পারে। মনোনয়ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দলের তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সমন্বয়হীনতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “মনোনয়ন বঞ্চনার ক্ষোভ সামাল না দিতে পারলে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি সংগঠনের ভেতরে বিভাজনের মুখে পড়তে পারে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ অঞ্চলে এটি প্রভাব ফেলতে পারে।”

অন্যদিকে, সাধারণ ভোটারদের অনেকে এমন পরিস্থিতিতে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও যাত্রীরা।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য পদক্ষেপ

বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, তাদের দাবির প্রতি দলীয় উচ্চপর্যায়ের নেতারা সাড়া না দিলে আরও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তবে জেলা বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, “দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত” এবং সবাইকে তা মেনে নিতে হবে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করা হবে।

রাজনৈতিক মহলে এখন প্রশ্ন—এই বিক্ষোভ কি দলীয় ঐক্য ভাঙার সূচনা, নাকি কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত সবাই একসঙ্গে নির্বাচনে মাঠে নামবে?

গৌরীপুরে ট্রেন অবরোধের ঘটনাটি শুধু মনোনয়নবঞ্চিত নেতার ক্ষোভ নয়, বরং দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে তৃণমূলের অসন্তোষের প্রতিফলন। এখন দেখার বিষয়, বিএনপি কীভাবে এই ক্ষোভ সামাল দিয়ে আসন্ন নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিতে পারে।

এম আর এম – ২০৮৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button