এনসিপি মুখ্য সমন্বয়কের মন্তব্য: ‘বিএনপি নিজের ক্ষতি করে জনগণের ক্ষতি করছে, লন্ডনের চুক্তিতে পতনের সূচনা’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারী বলেছেন, বিএনপির মৃত্যুঘণ্টা ইতিমধ্যেই বেজে গেছে। দলের অভ্যন্তরে বিভাজন, নেতাদের স্বার্থপর রাজনীতি ও দুর্নীতির সংস্কৃতি বিএনপিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজধানীতে আলোচনা সভায় নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারীর বক্তব্য
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ন টাওয়ারে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, মহানগর নেতারা ও বিভিন্ন জেলা ইউনিটের প্রতিনিধি। সভায় নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, “বিএনপি নিজের ক্ষতি করে হলেও দেশের জনগণের ক্ষতি করতে চায়। তাদের রাজনীতির মূল ভিত্তিই হলো প্রতিশোধ। তাই জনগণ আজ আর সেই রাজনীতি চায় না। বিএনপির মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “লন্ডনের চুক্তি অনুযায়ী যদি বিএনপি কখনো ক্ষমতায় আসে, তাদের পতন হবে এনসিপির হাতেই। কারণ তারা দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে।”
বিএনপির অতীত ও দুর্নীতির অভিযোগ
নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারী বিএনপির অতীতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, “বিএনপি কেবল দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। খালেদা জিয়ার পাশে ছিল দুর্নীতিবাজ নেতারা। সেই সময় রাষ্ট্রের প্রতিটি খাতে অনিয়ম ছিল নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়।”
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তারা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে চেয়েছিল। কিন্তু জনগণ সব জানে, এখন আর কেউ বিএনপির কথায় বিশ্বাস করে না। বিএনপি এখন একদল হতাশ রাজনীতিবিদের আশ্রয়স্থল।”
‘সংস্কার বাস্তবায়নে এগিয়ে এলে সুযোগ পাবে বিএনপি’
নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, “আমরা সবসময় সংস্কারের পক্ষে। যদি বিএনপি প্রকৃত সংস্কারের পথে আসে, তাহলে আমরা ভাবতে পারি তাদের কিছুটা সুযোগ দেওয়া যায়। কিন্তু তাদের বর্তমান অবস্থায় কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা দেখছি না।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “বিএনপির প্রার্থী তালিকায় এমন ব্যক্তিরাও আছেন যারা জুলাই সনদ পর্যন্ত দিতে চান না। এটাই প্রমাণ করে তারা আইন, নীতি ও শৃঙ্খলা মানে না। এমন দলের ভবিষ্যৎ কীভাবে উজ্জ্বল হতে পারে?”
আরপিও সংশোধনী নিয়ে মন্তব্য
সভায় নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারী আরপিও (Representation of the People Order) সংশোধনী অধ্যাদেশের বিষয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার প্রতীক বিক্রির দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। যারা প্রতীক বিক্রি করে রাজনীতি চালাত, তাদের দিন শেষ। এখন রাজনীতিতে আসবে যোগ্যতার প্রতিযোগিতা, ব্যবসার নয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এনসিপি সবসময় রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার পক্ষে। তাই আমরা চাই, প্রতিটি রাজনৈতিক দল নিজেদের দায়বদ্ধতা প্রমাণ করুক।”
জামায়াত প্রসঙ্গে বক্তব্য
জামায়াত ইসলামী প্রসঙ্গেও নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, “আমরা বহুবার পরামর্শ দিয়েছি, তাদের দলের নাম পরিবর্তন করা উচিত। কারণ, এই নামেই অতীতের অপরাধ ও বিতর্ক জড়িয়ে আছে। নতুন প্রজন্মের কাছে সেই ইমেজ বদলানো দরকার।”
তিনি মনে করেন, “যে কোনো রাজনৈতিক দলকে বাঁচতে হলে জনগণের সঙ্গে সংযোগ রাখতে হবে, অতীতের বোঝা নয়। বিএনপি ও জামায়াত দুটোই আজ সেই সংযোগ হারিয়েছে।”
এনসিপির মনোনয়ন নীতিতে কঠোরতা
নিজ দলের বিষয়ে নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, “এনসিপির মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় আমরা কঠোর থাকব। আমাদের কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যদি ন্যূনতম অভিযোগ থাকে, তাহলে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। আমরা চাই, সৎ ও যোগ্য মানুষ রাজনীতিতে আসুক।”
তিনি আরও জানান, এনসিপি আগামী নির্বাচনে জনগণের পাশে থেকে বাস্তবমুখী রাজনীতি করতে চায়। “আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমাদের দল হবে দুর্নীতিমুক্ত, জনমুখী এবং আদর্শভিত্তিক,” বলেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এনসিপি ধীরে ধীরে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে। বিশেষ করে নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারীর ধারাবাহিক বক্তব্যগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, দলটি আগামী নির্বাচনে তৃতীয় শক্তি হিসেবে জায়গা করে নিতে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, “এনসিপির ভাষ্যগুলো প্রমাণ করছে তারা বিএনপি-আওয়ামী লীগ দ্বন্দ্বের বাইরে একটি বিকল্প প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে চাইছে। তবে এর সফলতা নির্ভর করবে জনগণের আস্থা অর্জনের ওপর।”
নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারীর বক্তব্যে স্পষ্ট—তিনি শুধু বিএনপির সমালোচনাই করেননি, বরং বাংলাদেশের রাজনীতিতে নৈতিকতার অভাবের কথাও তুলে ধরেছেন। বিএনপির ভবিষ্যৎ নিয়ে যেমন প্রশ্ন তুলেছেন, তেমনি নতুন প্রজন্মকে সৎ রাজনীতির পথে আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এনসিপির এমন মন্তব্য ভোট রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটি সময়ই বলে দেবে। আপাতত, এনসিপি নেতৃত্বের এমন কড়া বক্তব্য রাজনীতির ময়দানে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এম আর এম – ২০৮২,Signalbd.com



