ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আসনে প্রার্থী না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “বেগম জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা ও রাজনৈতিক শালীনতার জায়গা থেকেই এই সিদ্ধান্ত।”
বিএনপি সম্প্রতি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ২৩৭টি আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। এই তালিকায় ফেনী-১, দিনাজপুর-৩ এবং বগুড়া-৭ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
এরপরই এনসিপি ঘোষণা দিয়েছে, তারা খালেদা জিয়ার আসনগুলোতে কোনো প্রার্থী দেবে না। রাজনৈতিক মহলে এই সিদ্ধান্তকে বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে “সমঝোতার ইঙ্গিত” হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এনসিপির সিদ্ধান্তের বিস্তারিত
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক ভূমিকার প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। তাঁর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আমাদের দলের জন্য শোভন হবে না।”
তিনি আরও জানান, এনসিপি দেশের ৩০০টি আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে খালেদা জিয়ার আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটি নীতিগতভাবে গৃহীত হয়েছে।
এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, দলটি বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় প্রার্থী যাচাই-বাছাই করছে এবং খুব শিগগিরই ১০০টি আসনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে।
বিএনপির প্রার্থী তালিকা ও প্রেক্ষাপট
গত সোমবার (৩ নভেম্বর) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ২৩৭ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেন।
তালিকা অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়া তিনটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন— ফেনী-১, দিনাজপুর-৩ এবং বগুড়া-৭।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি প্রাথমিক তালিকা; পরবর্তীতে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে বাকি আসনের নাম ঘোষণা করা হবে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
এনসিপির এই সিদ্ধান্তকে অনেকে রাজনৈতিক সৌজন্যের উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একদিকে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, অন্যদিকে ভবিষ্যতে বিএনপির সঙ্গে সম্ভাব্য রাজনৈতিক সমঝোতার ইঙ্গিতও বহন করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারুক আহমেদ বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি বিরোধী রাজনৈতিক দলের এই অবস্থান রাজনীতিতে ইতিবাচক বার্তা দেয়। এটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অংশ।”
অন্যদিকে বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, “এনসিপির এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে, এখনও দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব প্রভাব বিস্তার করছে।”
এনসিপির লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের দল প্রতিটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা জনগণের বিকল্প রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এই সপ্তাহের মধ্যেই প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বেগম খালেদা জিয়ার আসনে প্রার্থী দিচ্ছি না কারণ তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক অবদান ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াইকে আমরা শ্রদ্ধা করি। দেশের মানুষ তাঁকে একজন সংগ্রামী নেত্রী হিসেবে দেখেন, তাই তাঁর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমাদের নীতির সঙ্গে যায় না।”
রাজনৈতিক পটভূমি ও সম্ভাব্য প্রভাব
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এনসিপির এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনী মাঠে একটি ইতিবাচক বার্তা তৈরি করতে পারে। খালেদা জিয়ার আসনে প্রার্থী না দেওয়া মানে বিএনপির প্রতি আস্থা প্রদর্শনের একটি ইঙ্গিতও হতে পারে।
একই সঙ্গে এটি এনসিপির নির্বাচনী অবস্থানকে নরমপন্থী হিসেবে তুলে ধরছে, যা ভবিষ্যতে জোটবদ্ধ রাজনীতির দরজা খুলে দিতে পারে।
রাজনীতিবিদ ও নির্বাচনী বিশ্লেষক রাশেদুল ইসলাম বলেন, “এনসিপি যদি ভবিষ্যতে জোটে যুক্ত হতে চায়, তাহলে এখনকার এই সিদ্ধান্ত কৌশলগতভাবে লাভজনক হবে। এটি একধরনের রাজনৈতিক শুভেচ্ছা প্রকাশ।”
জনগণের প্রতিক্রিয়া ও সামাজিক গণমাধ্যমে আলোচনার ঝড়
ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। অনেকে মনে করছেন, এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘সম্মান ও কৌশলের এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টান্ত’।
বিশেষ করে বিএনপি সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে এনসিপির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন এবং এটিকে “গণতান্ত্রিক ঐক্যের নিদর্শন” হিসেবে উল্লেখ করছেন।
অন্যদিকে, কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক সতর্ক করে বলেছেন, “এনসিপির এই পদক্ষেপ হয়তো রাজনৈতিক সৌজন্য হলেও, বাস্তবে নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় এর প্রভাব সীমিত থাকবে।”
এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তারা পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে। দলটি এখনও কোনো জোটে না গেলেও, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না।
রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছে — এনসিপি কি বিএনপি নেতৃত্বাধীন বৃহত্তর জোটের অংশ হতে যাচ্ছে?
বেগম খালেদা জিয়ার আসনে প্রার্থী না দেওয়ার ঘোষণাকে অনেকেই সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দেখছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, আগামী নির্বাচনের আগে এই সিদ্ধান্ত দুই দলের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়াতে পারে।
অবশেষে দেখা যাক, এনসিপি কৌশলগত এই অবস্থান কতটা ধরে রাখতে পারে এবং নির্বাচনী বাস্তবতায় এর প্রভাব কীভাবে প্রতিফলিত হয়।
এম আর এম – ২০৮০,Signalbd.com



