রাজনীতি

মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত করলো বিএনপি

Advertisement

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষিত প্রার্থীদের তালিকা থেকে মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থী কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করেছে বিএনপি। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, অনিবার্য কারণবশত এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি ইতোমধ্যেই ২৩৭টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। তবে ঘোষণার পরদিনই মাদারীপুর-১ (শিবচর উপজেলা) আসনের প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত করে দলটি। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ঘোষণার বিস্তারিত

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত সোমবার (৩ নভেম্বর) গুলশানস্থ চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭টি সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। সেই তালিকায় মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে কামাল জামান মোল্লার নাম প্রকাশ করা হয়েছিল।
তবে মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে জানানো হয়, “অনিবার্য কারণবশত ঘোষিত মাদারীপুর-১ (শিবচর উপজেলা) আসন এবং মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম স্থগিত রাখা হলো।”
দলের এই হঠাৎ সিদ্ধান্তে স্থানীয় নেতা-কর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে।

পেছনের ঘটনা ও উত্তেজনা

ঘটনার পেছনের দিনেই, অর্থাৎ সোমবার (৩ নভেম্বর), কামাল জামান মোল্লার নাম ঘোষণার পর মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় উত্তেজনা দেখা দেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে আরেক প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর সমর্থকরা সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটান।
ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে, তবে এলাকায় বেশ কিছুক্ষণ উত্তেজনা বিরাজ করে। এই ঘটনাকেই বিএনপির মনোনয়ন স্থগিত করার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট

বিএনপি সূত্র বলছে, প্রার্থী ঘোষণার পরপরই স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ ও সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় দলটি দ্রুত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, এমন অবস্থায় ওই আসনে নির্বাচন পরিচালনা করা কঠিন হবে।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “দলীয় সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়া এখনো চলছে। মাদারীপুর-১ আসনের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত হলে তা যথাসময়ে জানানো হবে।”
অন্যদিকে, বিএনপির একাধিক স্থানীয় নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, “এই আসনে প্রার্থিতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভাজন ছিল। স্থগিতকরণে হয়তো দলটি সময় নিচ্ছে সঠিক সমন্বয়ের জন্য।”

প্রার্থীর প্রতিক্রিয়া

স্থগিত ঘোষণার পর কামাল জামান মোল্লা স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, তিনি দলীয় সিদ্ধান্তকে সম্মান করেন। তিনি বলেন, “দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল, আমি কৃতজ্ঞ। যদি কোনো কারণে সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়, সেটি দলের কৌশলগত বিষয়। আমি বিএনপির কর্মী হিসেবে সব সময় দলের পাশে আছি।”
এদিকে সাজ্জাদ হোসেন লাভলুর সমর্থকরা দাবি করেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন এবং স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়। তাঁরা আশা করছেন, পুনর্বিবেচনায় তাঁদের প্রার্থীতা দলটি গ্রহণ করবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি বর্তমানে নির্বাচনী কৌশলে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। বিশেষত যে আসনগুলোতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে, সেখানে দলটি চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণায় ধীরগতি দেখাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব হোসেন বলেন, “বিএনপি চাইছে নির্বাচনী ময়দানে ঐক্যবদ্ধভাবে নামতে। তাই যেসব এলাকায় দ্বন্দ্ব বা বিরোধ দেখা দিয়েছে, সেখানে আপাতত স্থগিত রাখাই তাদের কৌশল হতে পারে।”

নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে বিএনপির অবস্থান

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ইতোমধ্যে বেশ কিছু আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। দলটি ২৩৭টি আসনে নাম প্রকাশ করলেও, ৬৩টি আসন ফাঁকা রেখেছে যাতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনসঙ্গীদের প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী সমন্বয় করা যায়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যেসব আসনে যুগপৎ আন্দোলনের অংশীদার রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী দেবে, সেগুলোতে আমরা সমন্বয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেব।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মাদারীপুর-১ আসনের স্থগিতকরণ সেই সমন্বয়েরই অংশ হতে পারে।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ কী হতে পারে

বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি কবে নাগাদ মাদারীপুর-১ আসনের নতুন প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। তবে দলীয় সূত্র বলছে, যাচাই-বাছাইয়ের পর দ্রুতই নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
স্থানীয় নেতারা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি যদি ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়, তাহলে অভ্যন্তরীণ বিভাজন দূর করা সবচেয়ে জরুরি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই স্থগিত সিদ্ধান্ত দলের জন্য সময় নেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে, যা ভবিষ্যৎ প্রার্থী নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মাদারীপুর-১ আসনের মনোনয়ন স্থগিত করাকে অনেকেই বিএনপির ‘কৌশলগত পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন। স্থানীয় দ্বন্দ্ব নিরসন ও ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনী প্রচারের প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে কে থাকবেন — তা এখনো অনিশ্চিত। সবশেষে দেখা যাক, বিএনপি কীভাবে তাদের নির্বাচনী কৌশল পুনর্গঠন করে।

এম আর এম – ২০৭৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button