কর্মসংস্থান

সরকারি পদে নতুন: ৪১ ডেপুটি, ৬৭ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ

Advertisement

বাংলাদেশ সরকারের আইন ও বিচার প্রশাসনে বড়সড় রদবদল আনা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগহাইকোর্ট বিভাগে রাষ্ট্রের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য ৪১ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ৬৭ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন সলিসিটর মো. মঞ্জুরুল হোসেন

রাষ্ট্রের আইনি প্রতিনিধিত্বে নতুন অধ্যায়

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যে রয়েছেন—

  • অ্যাটর্নি জেনারেল,
  • অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল,
  • ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, এবং
  • সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল

এই নিয়োগের মাধ্যমে সরকার নতুনভাবে বিচার ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে। নবনিযুক্ত কর্মকর্তারা রাষ্ট্রের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ মামলা, সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয় ও প্রশাসনিক জটিলতার আইনি মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবেন।

নিয়োগের প্রেক্ষাপট

সম্প্রতি আইন মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, কিছু পদে দীর্ঘদিন ধরে শূন্যতা ছিল। সেই শূন্য পদ পূরণ এবং বিচারিক কার্যক্রমের গতি বাড়ানোর লক্ষ্যেই এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া সরকার নতুন প্রজন্মের দক্ষ আইনজীবীদের রাষ্ট্রীয় আইনি সেবায় যুক্ত করার মাধ্যমে একটি প্রফেশনাল টিম গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে। ফলে, যারা এবার নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের অনেকেই আদালতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ আইনজীবী এবং তরুণ প্রজন্মের উদীয়মান মুখ।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলদের ভূমিকা

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলরা (DAG) প্রধানত হাইকোর্ট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ রিট, ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলায় রাষ্ট্রের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তারা অ্যাটর্নি জেনারেলের অধীনে থেকে সরকারকে আইনি পরামর্শ প্রদান করেন এবং সংবিধান সম্পর্কিত বিষয়ে আদালতে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।

নবনিযুক্ত ৪১ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে রাষ্ট্রের পক্ষে মামলা পরিচালনার সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের দায়িত্ব

অন্যদিকে, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলরা (AAG) আদালতের নিয়মিত কার্যক্রমে রাষ্ট্রের পক্ষে উপস্থিত থাকেন এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলদের সহায়তা করেন। তারা প্রাথমিক শুনানি, লিখিত যুক্তি ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রস্তুত করে আদালতে উপস্থাপন করেন।

৬৭ জন নতুন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের ফলে হাইকোর্ট বিভাগের মামলা নিষ্পত্তির গতি বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

প্রজ্ঞাপনের তথ্য ও কার্যকারিতা

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নিয়োগপ্রাপ্তদের নাম, পদবি এবং দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কাঠামো অনুযায়ী। তাদের দায়িত্ব কার্যকর হবে প্রজ্ঞাপন প্রকাশের দিন থেকেই

এছাড়া, প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত শর্তে দায়িত্ব পালন করবেন এবং তাদের কাজের মূল্যায়ন নিয়মিতভাবে করা হবে।

আইন মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য

আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান,

“রাষ্ট্রের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ ও যোগ্য আইনজীবীদের নির্বাচন করা হয়েছে। এই নিয়োগের মাধ্যমে আদালতের কাজ আরও গতিশীল হবে, বিশেষ করে বিচারপ্রার্থীদের দ্রুত ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”

তিনি আরও বলেন, সরকারের এই পদক্ষেপ আইনের শাসন ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের ইতিহাস ও ভূমিকা

বাংলাদেশে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় রাষ্ট্রের প্রধান আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে। সংবিধানের আর্টিকেল ৬৪ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল সরকারের আইনি প্রতিনিধি।

এই কার্যালয়ের মূল কাজ হলো—

  1. সরকারের পক্ষে আদালতে মামলা পরিচালনা,
  2. রাষ্ট্রীয় নীতি ও আইন প্রণয়নে পরামর্শ দেওয়া,
  3. সংবিধান ব্যাখ্যা সংক্রান্ত বিষয়ে মতামত দেওয়া,
  4. গুরুত্বপূর্ণ রিট ও মানবাধিকার বিষয়ক মামলায় রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করা।

আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন

বাংলাদেশের সংবিধানে আইনের শাসন নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক নীতি। এজন্য রাষ্ট্রের পক্ষে যোগ্য আইনি প্রতিনিধি থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নবনিযুক্ত ডেপুটি ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলরা আদালতের জটিল মামলা, প্রশাসনিক রিট, মানবাধিকার ও নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করবেন। তাদের নিয়োগের ফলে বিচার ব্যবস্থায় দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আইনজীবী মহলের প্রতিক্রিয়া

বিভিন্ন আইনজীবী সংগঠন এই নিয়োগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের একজন সদস্য বলেন,

“রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মামলা পরিচালনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেকেই আদালতে অভিজ্ঞ ও মেধাবী আইনজীবী, ফলে আদালতের কাজের মান আরও উন্নত হবে।”

তবে কিছু আইনজীবী মনে করছেন, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার পাশাপাশি রাজনৈতিক বিবেচনা যেন প্রভাব না ফেলে, সেটিও নিশ্চিত করা জরুরি।

বিচারব্যবস্থায় নতুন গতি আনবে এই পদক্ষেপ

আইন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, হাইকোর্টে বর্তমানে প্রায় ৫ লাখের বেশি মামলা বিচারাধীন। এই বিপুল মামলার চাপ সামলাতে রাষ্ট্রীয় পক্ষে আরও দক্ষ আইনজীবী প্রয়োজন।

নতুন নিয়োগের ফলে প্রতিটি আদালতে সরকারপক্ষের প্রতিনিধিত্ব আরও কার্যকর হবে। এটি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, আদালতের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা এবং বিচার প্রাপ্তিতে জনবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক হবে।

পূর্ববর্তী নিয়োগ ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ

এর আগে ২০২৩ সালের শেষ দিকে সরকার ৩০ জনের বেশি ডেপুটি ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দিয়েছিল। এবার সংখ্যাটি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি ঐতিহাসিক পরিমাণের নিয়োগ, যা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি।

আইন বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই উদ্যোগ সরকারের বিচারপ্রার্থী জনগণের আস্থা অর্জনের প্রচেষ্টারই অংশ।

নবনিযুক্তদের দায়িত্ব গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ

আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নবনিযুক্ত কর্মকর্তাদের জন্য শিগগিরই একটি ওরিয়েন্টেশন ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা হবে। সেখানে আদালত পরিচালনা, মামলার নথি প্রক্রিয়া ও আইনি আচরণবিধি সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা এই প্রশিক্ষণ পরিচালনা করবেন।

বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থায় এই নিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি শুধু প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়, বরং রাষ্ট্রের পক্ষে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে আরও সুসংগঠিত করবে।

নবনিযুক্ত ডেপুটি ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলরা দায়িত্ব গ্রহণের পর বিচারব্যবস্থায় নতুন গতি ও স্বচ্ছতা আনবেন—এমনটাই আশা দেশজুড়ে আইনজীবী মহলের।

MAH – 13616 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button