বিশ্ব

টিটিপি পাকিস্তানের নিজস্ব নীতির ফল: মাওলানা মুজাহিদ

Advertisement

ইমারাত ইসলামিয়া সরকারের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, তাহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) মূলত পাকিস্তানের নিজস্ব নীতির ফলাফল। তিনি আরও মন্তব্য করেছেন, টিটিপি ইমারাত সরকারের ছত্রছায়ায় কাজ করে না, বরং পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্য পূরণের একটি হাতিয়ার।

রবিবার (২ নভেম্বর) তলো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে মুজাহিদ বলেন, “টিটিপি ইমারাত সরকারের নিয়ন্ত্রণে নয়। তারা পাকিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক এবং সামরিক নীতির প্রতিফলন। ইসলামাবাদ চায় আমরা আফগানিস্তানের মাটিতে টিটিপিকে নিয়ন্ত্রণ করি, কিন্তু এটি আমাদের এখতিয়ারের বাইরে। আমরা তাদের কেবল আফগানিস্তানের মাটিতে কোনও দেশের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালাতে দেই না।”

পাকিস্তানের প্রভাব ও টিটিপি

মাওলানা মুজাহিদ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন যে, পাকিস্তান টিটিপিকে একটি রাজনৈতিক ও সামরিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, “দোহা এবং ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পাকিস্তান একাধিকবার দাবি করেছে যে, টিটিপি তাদের জন্য একটি সমস্যা। তারা চায় আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করি। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি, আফগানিস্তান মাটিতে কোনও দেশের বিরুদ্ধে কার্যক্রম করার অনুমতি আমরা দিই না। এখন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পাকিস্তানের।”

টিটিপি পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে সক্রিয়। পাকিস্তানের সেনারা নিয়মিত টিটিপির কর্মকাণ্ডে নীরব সমর্থন বা সহযোগিতা প্রদান করছে বলে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন। মুজাহিদের বক্তব্য অনুযায়ী, টিটিপি মূলত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক কৌশল বাস্তবায়নের একটি মাধ্যম।

আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও মার্কিন হস্তক্ষেপ

মুজাহিদ আরও অভিযোগ করেছেন যে, আমেরিকা আফগানিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে এবং পাকিস্তানকে এ কাজে ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, “মার্কিন ড্রোন আফগানিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করছে এবং পাকিস্তান এই অপারেশনকে সাহায্য করছে। এটি আমাদের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন।”

বিশ্লেষকরা মনে করেন, আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলার ঘটনা শুধু নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ নয়, এটি আফগানিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় হুমকি। টিটিপি এবং পাকিস্তানের এ ধরনের হস্তক্ষেপ স্থানীয় জনগণের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি করছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও আফগান নিরাপত্তা

দোহা এবং ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যদিও আফগান সরকারের পক্ষ থেকে জবিহুল্লাহ মুজাহিদের মতামত স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে পাকিস্তান টিটিপিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, টিটিপি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নীতি এবং আফগানিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের একটি হাতিয়ার। এই পরিস্থিতি আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সংকটের সম্ভাবনা তৈরি করছে।

টিটিপির কার্যক্রম ও প্রভাব

টিটিপি মূলত পাকিস্তানের পাহাড়ি ও উপজাতি অঞ্চলে সক্রিয়। তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং সীমান্ত অস্থিরতার জন্য দায়ী। আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় তাদের উপস্থিতি দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করছে।

মুজাহিদ বলেন, “টিটিপি কেবল পাকিস্তানের স্বার্থে কাজ করছে। তাদের কার্যক্রম ইমারাত সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, আফগানিস্তান সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকে, টিটিপির কার্যক্রম স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

মার্কিন ড্রোন হামলা এবং পাকিস্তানের ভূমিকা

মুজাহিদ বলেছেন, মার্কিন ড্রোন হামলায় পাকিস্তানকে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা মার্কিন ড্রোন আফগানিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করতে দেই না, কিন্তু পাকিস্তানকে ব্যবহার করে এই অপারেশন করা হচ্ছে।”

বিশ্লেষকরা মনে করেন, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তে টিটিপি এবং মার্কিন ড্রোনের সংযোগ কেবল স্থানীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করছে না, এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরকেও আকর্ষণ করছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা

মাওলানা মুজাহিদ জানান, আফগানিস্তান সরকার সব সময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংলাপ রাখতে আগ্রহী। তিনি বলেন, “আমরা চাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখাক। পাকিস্তান এবং টিটিপি-র কার্যক্রম যেন আফগান জনগণের নিরাপত্তা এবং শান্তি নষ্ট না করে।”

বিশ্লেষকরা মনে করেন, টিটিপি নিয়ে কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পেলে পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করতে পারে। তবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক এবং সামরিক স্বার্থ এ পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।

জবিহুল্লাহ মুজাহিদের মন্তব্য স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে যে, টিটিপি পাকিস্তানের রাজনৈতিক এবং সামরিক কৌশলের একটি অংশ। আফগানিস্তানের মাটিতে তাদের কার্যক্রম সীমান্তে স্থিতিশীলতা এবং স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরদারি এবং আফগান সরকারের স্পষ্ট অবস্থান ছাড়া এই সমস্যা সমাধান করা কঠিন।

টিটিপি, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের এই জটিল সম্পর্ক কেবল স্থানীয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার উপরও প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং টিটিপির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা একমাত্র উপায় হলো আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সহযোগিতা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক সংলাপ।

MAH – 13610 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button