গোপালগঞ্জে চার তলার ব্যালকনি থেকে পড়ে এক বছরের শিশু রুহি হাওলাদারের মৃত্যু হয়েছে। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও সে বাঁচানো যায়নি। পুলিশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
গোপালগঞ্জে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। চার তলার একটি ব্যালকনি থেকে পড়ে এক বছরের শিশু রুহি হাওলাদারের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যরা এবং স্থানীয়রা এই দুর্ঘটনায় শোকস্তব্ধ। পুলিশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
দুর্ঘটনার বিবরণ
ওসি মো. শাহ আলম জানান, দুর্ঘটনা ঘটেছিল গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে আটটার দিকে। রুহি তার ফুফুর বাড়ির চার তলার ব্যালকনি থেকে পড়ে যায়। স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও তার অবস্থা ক্রমে অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে রুহির মৃত্যু ঘটে।
শিশুটির পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পরিবার ও পেছনের প্রেক্ষাপট
নিহত রুহি হাওলাদার মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার খালিয়া এলাকার সোহেল হাওলাদারের কন্যা। রুহি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে গোপালগঞ্জ শহরের আলিয়া মাদরাসার পাশে ফুফুর বাড়িতে থাকতেন। স্থানীয়রা জানান, ছোট্ট রুহি খুবই চঞ্চল এবং খেলাধুলা করতে ভালোবাসতো।
ফুফুর বাড়ির চার তলার ব্যালকনিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে পরিবারের সদস্যরা ধারণা করছেন।
প্রতিক্রিয়া ও স্থানীয়দের উদ্বেগ
দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। আশপাশের মানুষজন মনে করছেন, শিশুরা বাড়ির উঁচু স্থানে নিরাপত্তার অভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে। রুহির মৃত্যু একটি সতর্কবার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের এক কর্মকর্তা বলেন, “ছোট শিশুদের নিরাপত্তার জন্য বাড়ির উঁচু অংশে সুরক্ষা ব্যবস্থার জোরদার প্রয়োজন। পরিবারগুলোকে সচেতন হতে হবে।”
পুলিশি প্রক্রিয়া ও তদন্ত
গোপালগঞ্জ সদর থানার পুলিশ দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত কোনো তৃতীয় পক্ষের সম্ভাবনা বাদ দিয়েছেন। ওসি মো. শাহ আলম জানান, এটি একটি দুর্ঘটনাজনিত ঘটনা এবং পরিবারের সহমত নিয়ে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ এলাকার বাড়ি মালিক ও স্থানীয়দের সতর্ক থাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা আর না ঘটে।
বাংলাদেশে শিশু নিরাপত্তা বিষয়ক সতর্কতা
দেশে প্রতিবছর অনেকে শিশু উঁচু স্থান থেকে পড়ে আহত বা প্রাণ হারান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের নিরাপত্তার জন্য বাড়ি এবং বাসস্থানগুলোতে সীমানা, রেলিং এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি করা জরুরি।
শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন, “বাড়ির উঁচু স্থানে খেলাধুলা করার সময় শিশুদের সুরক্ষা ব্যবস্থা অপরিহার্য। অভিভাবকরা সন্তানের উপর সতর্ক নজর রাখুন এবং বিপদসংকেত বুঝতে শেখান।”
রুহি হাওলাদারের মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের শিশুদের নিরাপত্তা বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে পরিবারের, স্থানীয় প্রশাসন এবং সমাজের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সচেতনতা, সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নিয়মিত নজরদারিই একমাত্র উপায়।
এম আর এম – ২০১৫,Signalbd.com



