ইউএসএআইডির কর্মীদের বাসায় থাকার নির্দেশ ট্রাম্প প্রশাসনের
![ইউএসএআইডির কর্মীদের বাসায় থাকার নির্দেশ ট্রাম্প প্রশাসনের](https://signalbd.com/wp-content/uploads/2025/02/single-bd-6.webp)
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) এর ওয়াশিংটন ডিসির প্রধান কার্যালয় হঠাৎ করে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার স্থানীয় সময় সকালে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। সংস্থার কর্মীদের রোববার মধ্যরাতের কিছু পরে এক ই-মেইল পাঠিয়ে অফিসে না আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইউএসএআইডির সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।
ই-মেইলের কপি সিএনএনের হাতে এসেছে, যেখানে লেখা রয়েছে, “সংস্থার নেতৃত্বের নির্দেশনায় ইউএসএআইডির প্রধান কার্যালয় সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে বন্ধ থাকবে। প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে। তবে বিশেষ প্রয়োজন হলে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা কর্মীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করবেন।”
ইউএসএআইডি বন্ধের সম্ভাবনা
এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি অশুভ সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইউএসএআইডির কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনামূলক অবস্থান নিয়েছে। ট্রাম্প এবং তার ঘনিষ্ঠরা দাবি করেছেন যে সংস্থাটি পক্ষপাতদুষ্ট এবং ডেমোক্র্যাটদের প্রতি সহানুভূতিশীল।
সোমবার সকালে এক্স স্পেসে (সাবেক টুইটার) এক আলাপচারিতায় প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক বলেছেন, “ট্রাম্প ইউএসএআইডি বন্ধের বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।” মাস্ক আরও বলেন, “আমি কয়েকবার ট্রাম্পের সাথে ইউএসএআইডি নিয়ে কথা বলেছি এবং তিনি নিশ্চিত করেছেন যে এই সংস্থাটি বন্ধ করতে চান।”
অর্থায়ন সংকট ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা
কয়েক দিন ধরে ইউএসএআইডির ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে। সংস্থাটির তহবিল অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে এবং কয়েকজন কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, যা এই জল্পনা-কল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে। ট্রাম্পের প্রশাসন কেন্দ্রীয় সরকারের খরচ কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং ইউএসএআইডি তার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
ইউএসএআইডি প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবিক সহায়তা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য শত শত কোটি ডলার ব্যয় করে। এই অর্থায়ন এখন প্রশ্নের মুখে। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগত পরিবর্তনের ফলে সংস্থার কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।
ইলন মাস্কের সমালোচনা
ইউএসএআইডিকে “অপরাধী সংস্থা” হিসেবে আখ্যায়িত করে ইলন মাস্ক বলেন, “এটি বন্ধ করে দেওয়ার সময় এসেছে।” মাস্ককে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই পদে দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি ইউএসএআইডির ব্যয় সংকোচন টাস্কফোর্সের কার্যক্রম নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন।
সম্প্রতি ইউএসএআইডির প্রধান কার্যালয়ে ডিওজিই টাস্কফোর্সের সদস্যদের ঢুকতে না দেওয়া হলে মাস্ক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, “এটি একটি অদক্ষ, দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা। আমরা এটি বন্ধ করব।”
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
ইউএসএআইডি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “এই সংস্থা একদল উগ্র পাগলের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আমরা তাদের বের করে আনছি এবং তারপর এর ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।” ট্রাম্পের এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে তার প্রশাসন ইউএসএআইডিকে বন্ধ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইউএসএআইডির এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংস্থাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন, এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধ হলে এই খাতে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হতে পারে।
ভবিষ্যৎ নির্দেশনা
ইউএসএআইডির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা কর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং পরবর্তী নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। যদিও প্রশাসনের সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত নয়, তবে এটি স্পষ্ট যে ইউএসএআইডি একটি বড় পরিবর্তনের মুখোমুখি।
উপসংহার
ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক নীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। ইউএসএআইডি বন্ধ হলে তা শুধু দেশীয় নয়, বৈশ্বিক পর্যায়েও প্রভাব ফেলবে। সংস্থার ভবিষ্যৎ এখন সময়ের হাতে।