বাংলাদেশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে অস্থায়ী গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকরা

Advertisement

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে গত ১৮ অক্টোবর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আমদানি শেড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর, পোশাক রপ্তানিকারকরা নিজ উদ্যোগে একটি অস্থায়ী গুদাম নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নতুন গুদামটি বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ তে স্থাপন করা হবে, যেখানে পোশাক শিল্পের জরুরি আমদানি কার্যক্রম দ্রুত ও নিরাপদভাবে চালানো সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) যৌথভাবে এই উদ্যোগের দায়িত্ব নিয়েছে। তারা জানিয়েছে, অস্থায়ী গুদাম স্থাপন দ্রুত কার্যকর করা হবে যাতে রপ্তানি কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে পোশাক শিল্পের মূল্যবান কাঁচামাল, রপ্তানির জন্য প্রস্তুত পোশাক এবং গুরুত্বপূর্ণ নমুনা ধ্বংস হয়ে গেছে। বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান বলেন, “এই ধ্বংস হওয়া স্যাম্পলগুলো নতুন ব্যবসার পথ উন্মোচন করে এবং ব্যবসায়িক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।”

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য বিজিএমইএ সদস্যদের কাছে অনলাইনে তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০টি কারখানার পণ্য আকাশপথে রপ্তানি হয়, তাই ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক।

টার্মিনাল-৩-তে অস্থায়ী গুদামের সুবিধা

টার্মিনাল-৩ তে অস্থায়ী গুদাম স্থাপন মূলত আমদানি করা মূল্যবান কাঁচামাল এবং পণ্যের দ্রুত সুরক্ষার জন্য করা হচ্ছে। এটি অস্থায়ী হলেও, রপ্তানি কার্যক্রম সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বিজিএমইএ জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ‘রাব হল’ স্থাপনের জন্য কার্যাদেশ দিয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে, যাতে রপ্তানিকারকরা কোনো বিলম্ব ছাড়াই তাদের পণ্য পরিবহন করতে পারেন।

যৌথ উদ্যোগ ও সমন্বয়

২০ অক্টোবর বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এবং বাণিজ্য ও বেসরকারি বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন একটি বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কার্গো ভিলেজের বিকল্প হিসেবে অস্থায়ী গুদাম নির্মাণ করা হবে।

এই উদ্যোগ সরকারের সহযোগিতায় এবং শিল্পপক্ষের সমন্বয়ে নেওয়া হয়েছে। বিজিএমইএ আশা করছে, এই যৌথ উদ্যোগ দেশের সামগ্রিক রপ্তানি-বাণিজ্য সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা করবে।

অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব

অগ্নিকাণ্ডের ফলে শুধু কাঁচামাল নয়, রপ্তানির জন্য প্রস্তুত পোশাক এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক নমুনা ধ্বংস হয়েছে। বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ জানিয়েছেন, আগুনের পর পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল। তারা আশা করছেন, অস্থায়ী গুদাম স্থাপনের মাধ্যমে দ্রুতপদ্ধতিতে পণ্য ক্লিয়ার করা সম্ভব হবে।

এছাড়া, নতুন ব্যবস্থা অনুযায়ী প্রতিদিনের পণ্য টার্মিনাল-৩ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ক্লিয়ার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা আগের ৭২ ঘণ্টার তুলনায় দ্রুত।

শিল্প নেতাদের মন্তব্য

বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, অস্থায়ী গুদাম স্থাপন দেশের রপ্তানি কার্যক্রমের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ। এটি বিশেষ করে পোশাক শিল্পে উৎপাদন ও রপ্তানি সময়মতো চালু রাখতে সহায়তা করবে।

শিল্প নেতারা জানিয়েছেন, এই ধরনের উদ্যোগ শিল্পের স্বার্থে খুবই প্রয়োজন। তারা আশা করছেন, সরকারের সহযোগিতায় এবং রপ্তানিকারকদের সমন্বয়ে ভবিষ্যতে এমন ধরনের বিপর্যয় পরিস্থিতি মোকাবিলা আরও কার্যকরভাবে করা সম্ভব হবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ জানিয়েছে, অস্থায়ী গুদাম স্থাপনের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত কার্গো শেড পুনঃনির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। এ বিষয়ে সরকারের সহায়তা আশা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হবে এবং ভবিষ্যতে অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে শিল্পকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম করবে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের কারণে পোশাক রপ্তানিকারকরা অস্থায়ী গুদাম স্থাপন করছেন, যা রপ্তানি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই উদ্যোগ শিল্পের স্বার্থে সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এম আর এম – ১৯৭৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button