বানিজ্য

কুঁড়ার তেল রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল এনবিআর

Advertisement

বাংলাদেশ থেকে রাইস ব্র্যান অয়েল বা কুঁড়ার তেল রপ্তানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (রেগুলেটরি ডিউটি) আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আজ রোববার এক প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর কুঁড়ার তেল রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের বিষয়টি জানায়।

শুল্ক আরোপের কারণ ও প্রেক্ষাপট

এনবিআর-এর জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কাস্টমস আইন ২০২৩-এর ক্ষমতাবলে কুঁড়ার তেল রপ্তানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ হারে রেগুলেটরি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত—উভয় ধরনের কুঁড়ার তেল রপ্তানিতে এ শুল্ক প্রযোজ্য হবে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) গত ডিসেম্বরে সব ধরনের কুঁড়ার তেল রপ্তানির ওপর ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের সুপারিশ করেছিল। দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং রপ্তানির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এই শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়।

কুঁড়ার তেল রপ্তানির অনুমোদন সংক্রান্ত নীতি

এনবিআর-এর এই প্রজ্ঞাপনের আগে, গত ১৫ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক আদেশ জারি করে জানায়, এখন থেকে কুঁড়ার তেল রপ্তানির জন্য পূর্বানুমোদন নিতে হবে। ট্যারিফ কমিশনও কুঁড়ার তেল রপ্তানিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের শর্ত আরোপের সুপারিশ করেছিল। নতুন এই শুল্ক নীতির ফলে কুঁড়ার তেল রপ্তানি আগের তুলনায় ব্যয়বহুল হবে এবং স্থানীয় বাজারে এ তেলের সরবরাহ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কুঁড়ার তেলের উৎপাদন ও বাজারের অবস্থা

গত এক দশকে দেশে কুঁড়ার তেলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং গ্রাহক পর্যায়েও এর ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১১ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে রশিদ অয়েল মিলস লিমিটেড ‘হোয়াইট গোল্ড’ ব্র্যান্ড নামে প্রথম ধানের কুঁড়ার তেল উৎপাদন শুরু করে। এরপর বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান এ ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ রাইস ব্র্যান অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ২০টি রাইস ব্র্যান অয়েল মিল রয়েছে। এসব মিলের বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ৪ লাখ ৫৩ হাজার টন। তবে, দেশের ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ২২ থেকে ২৩ লাখ টন। এই চাহিদার অধিকাংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।

শুল্ক আরোপের প্রভাব

বিশেষজ্ঞদের মতে, কুঁড়ার তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে দেশে এর বাজারমূল্য কমতে পারে, যা সাধারণ ভোক্তাদের জন্য ইতিবাচক হবে। তবে, রপ্তানিকারকদের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

বাংলাদেশ রাইস ব্র্যান অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের একজন কর্মকর্তা জানান, “দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে রপ্তানিকারকদের জন্য শুল্ক আরোপ একটি বাধা সৃষ্টি করতে পারে। রপ্তানি নীতি সংশোধনের মাধ্যমে এ শিল্পের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন নিশ্চিত করা দরকার।”

কৃষি অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশে কৃষিভিত্তিক শিল্পের সম্প্রসারণের জন্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা রাখা উচিত। এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত বলে তারা মত প্রকাশ করেন।

সরকারের অবস্থান

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কুঁড়ার তেল রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত মূলত দেশের ভোজ্যতেল সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য নেওয়া হয়েছে। এনবিআর-এর এক কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো স্থানীয় বাজারে তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং অযাচিত রপ্তানি প্রতিরোধ করা। ভবিষ্যতে বাজার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে।”

ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের প্রতিক্রিয়া

শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্ক আরোপের ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমাদের পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে রপ্তানি করা কঠিন হয়ে পড়বে। সরকার যদি রপ্তানির বিকল্প সুবিধা দেয়, তাহলে এটি শিল্পের জন্য সহায়ক হতে পারে।”

উপসংহার

কুঁড়ার তেলের রপ্তানির ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এটি রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। সরকার, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খোঁজা গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button