আঞ্চলিক

জামালপুরে কাভার্ডভ্যান চাপায় ইজিবাইকের তিন যাত্রী নিহত, আহত আরও পাঁচ

Advertisement

জামালপুরে একটি হৃদয়বিদারক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন ইজিবাইক যাত্রী নিহত হয়েছেন, আর আহত হয়েছেন আরও পাঁচ জন, যাদের মধ্যে শিশু ও নারীও রয়েছেন। এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটেছে জামালপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক সড়কের দিকপাইদ এলাকায়, জামালপুর ইকোনমিক জোনের কাছাকাছি সোমবার (২৭ অক্টোবর) বেলা ১২:৩০ এর দিকে।

দুর্ঘটনার বিবরণ

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনাকালীন সময় জামালপুর থেকে টাঙ্গাইলের দিকে যাচ্ছিল একটি কাভার্ডভ্যান। ইকোনমিক জোনের এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ইজিবাইককে কাভার্ডভ্যানটি চাপা দেয়।
ঘটনাস্থলে মৃত হন ইজিবাইকের যাত্রী রাশেদ মিয়া। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় জেনারেল হাসপাতাল-এ পাঠানো হলে চিকিৎসকরা চান মিয়া এবং আরিফা খাতুন পলিকে মৃত ঘোষণা করেন।

এছাড়া, আহত অবস্থায় আরও পাঁচজনকে, যার মধ্যে শিশুও রয়েছে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-এ পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসাধীনদের মধ্যে কারো অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

স্থানীয়দের তৎপরতা

দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাভার্ডভ্যানটি আটক করার চেষ্টা করেন। তবে চালক ও তার সহযোগী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
জামালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুস সাকিব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “ঘটনার পরপরই কাভার্ডভ্যানটি আটক করা হয়, কিন্তু চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছেন। আমরা ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান সংগ্রহ করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

দুর্ঘটনার কারণ ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ

জানা গেছে, দুর্ঘটনার মূল কারণ হতে পারে অতিরিক্ত গতিসহ recklessness (অবহেলা) এবং নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থার অভাব। ইজিবাইক ও কাভার্ডভ্যানের মতো যানবাহনের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা মানের তফাৎ দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ায়। স্থানীয়রা জানিয়েছে, এই সড়কটি দুর্ঘটনার জন্য পরিচিত এবং এখানে দ্রুতগতির যানবাহন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এমন দুর্ঘটনা পূর্বাভাসযোগ্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট যানবাহন যেমন ইজিবাইক এবং ভ্যানের মধ্যে গতি নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক আইন অনুসরণ ও সড়ক নিরাপত্তা মান মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে জনসাধারণ ও স্থানীয় প্রশাসনের উভয়ের সচেতনতা অপরিহার্য।

আহতদের চিকিৎসা ও হাসপাতালের পরিস্থিতি

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে শিশুসহ কয়েকজনের অবস্থা সংকটজনক। তারা অতি জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। হাসপাতালের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, “আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, আহতদের সকল প্রকার জরুরি সেবা নিশ্চিত করার জন্য। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের অবস্থা আরও স্পষ্ট হবে।”

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। একজন স্থানীয় বলেন, “আমরা এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি চাই। এমনকি ছোট যানবাহনের চালকদের সচেতন করতে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।”

অন্য একজন স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, “এই সড়কটি এতটা ঝুঁকিপূর্ণ যে দিনে দিনে এমন দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরো প্রাণহানি ঘটতে পারে।”

প্রশাসনের পদক্ষেপ

জামালপুর থানা প্রশাসন ইতিমধ্যেই সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেয়া এবং পালিয়ে যাওয়া চালক ও হেলপারের খোঁজে তদন্ত শুরু করেছে।
অফিসার ইনচার্জ নাজমুস সাকিব জানান, “যত দ্রুত সম্ভব আমরা সব প্রমাণ সংগ্রহ করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। চালক ও হেলপারকে দ্রুত গ্রেফতার করা আমাদের অগ্রাধিকার।”

নিরাপত্তা সচেতনতা ও সড়ক ব্যবস্থাপনা

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের আঞ্চলিক সড়কগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। এতে অন্তর্ভুক্ত:

  • ছোট ও বড় যানবাহনের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা
  • ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে মানা
  • উচ্চ গতির যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ
  • সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি
  • স্থানীয় প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারি

জামালপুরের এই দুর্ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা এবং সচেতনতা ছাড়া জীবন অমূল্য। আহতদের দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা নিশ্চিত করা, পাশাপাশি চালক ও যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।

দুর্ঘটনার ঘটনায় শোকাহত পরিবারগুলোকে স্থানীয় প্রশাসন এবং কমিউনিটি সদস্যরা সহায়তা করছেন। আশা করা যাচ্ছে, প্রয়োজনীয় আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।

MAH – 13503 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button