ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ফলে আবুল কালাম (৩৫) মারা গেছেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় বসবাস করতেন এবং ঢাকার মতিঝিলের একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কর্মরত ছিলেন। রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
আবুল কালামের অকালমৃত্যু তার পরিবার ও গ্রামের মানুষদের মধ্যে গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে। স্বজনেরা এই দুর্ঘটনা মানতে পারছেন না।
শৈশব ও পারিবারিক জীবন
আবুল কালাম শৈশবে বাবা-মা হারিয়েছিলেন। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের জলিল চোকদার ও হনুফা বেগম দম্পতির ছেলে আবুল কালাম ছিলেন চার ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে সবার ছোট। বাবা-মা না থাকায় তিনি বড় ভাই-বোনদের কাছে বড় হয়েছেন এবং সংসারের দায়িত্বে সাহায্য করেছেন।
পরিবারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে গিয়ে আবুল কালাম নিজেও জীবনের নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। ২০১২ সালে তিনি সংসারের স্বাচ্ছন্দ্য ফেরানোর জন্য মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে পাশের গ্রামের আইরিন আক্তারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দাম্পত্য জীবনে তাঁদের দুই সন্তানের জন্ম হয়—ছেলে ছয় বছর বয়সী ও মেয়ে চার বছর বয়সী।
দুর্ঘটনার বিস্তারিত
রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকার মতিঝিলে কাজে আসেন আবুল কালাম। কাজের জন্য বের হওয়ার সময় ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে তাঁর ওপর চাপা পড়ে। সেখানেই তিনি মারা যান।
পুলিশ এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ নেন।
স্বজনদের শোক ও আহাজারি
ঈশ্বরকাঠি গ্রামের বাড়িতে আবুল কালামের অকালমৃত্যুর খবরে স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বড় ভাই খোকন চোকদার বলেন, “আমার ভাইটি কখনও কারও ক্ষতি করেনি। সংসারের সব দায়িত্ব পালন করলেও এমন অকালমৃত্যু কিভাবে হলো, তা আমরা মানতে পারছি না। তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের এখন কে দেখবে?”
বড় বোন সেলিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ভাইটি সারা জীবন কষ্ট করে বেঁচে ছিল। আজ সে নিজেও না ফেরার দেশে চলে গেছে। দুই শিশু এখন অসহায়।” গ্রামের মানুষ এবং বন্ধুদেরও শোকাহত দেখা যায়।
বন্ধুদের স্মৃতি
আবুল কালামের বাল্যকালের বন্ধু রিহিনুজ্জামান বলেন, “এক মাস আগে গ্রামে আসার সময় তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। সে হাস্যোজ্জ্বল ছিল। আজ সেই বন্ধুটি নেই, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।” বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের মতে, আবুল কালাম সবসময় দয়া ও সহানুভূতির প্রতীক ছিলেন।
পারিবারিক দায়িত্ব ও কর্মজীবন
আবুল কালাম ঢাকায় কাজের পাশাপাশি গ্রামে আসতেন এবং পরিবারের জমিজমা ও ফসলের খোঁজ নিতেন। তিনি পরিবারকে আর্থিকভাবে স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তাঁর অকালমৃত্যুর ফলে পরিবার এখন গভীর শোকে দগ্ধ।
পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, আবুল কালামের মৃত্যুতে দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। স্ত্রী আইরিন আক্তারও শোকে অস্থির, তিনি জানাচ্ছেন সন্তানদের দেখাশোনা ও সংসারের দায়িত্বে এখনো চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
মেট্রোরেল দুর্ঘটনার প্রভাব
ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ঘটনায় স্থানীয় মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করতে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন।
শৈশবে বাবা-মা হারানো আবুল কালাম কঠোর পরিশ্রম ও দায়িত্ববোধে বড় হয়েছেন। তিনি তার পরিবার ও কর্মজীবনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের দুর্ঘটনায় তাঁর অকালমৃত্যু পরিবার, বন্ধু এবং গ্রামের মানুষদের হৃদয় ছিন্ন করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অবিলম্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা অপরিহার্য।
এম আর এম – ১৯৫৮,Signalbd.com



