
যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার দুই প্রধান তেল কোম্পানির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। রোসনেফট ও লুকওয়েলকে লক্ষ্য করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা মস্কোর যুদ্ধের অর্থায়ন সীমিত করতে সাহায্য করবে। নিষেধাজ্ঞার খবর প্রকাশের পরপরই বিশ্ববাজারে তেলের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের ঘোষণা
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ বুধবার জানিয়েছে, রাশিয়ার রোসনেফট ও লুকওয়েলকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে সীমিত করতে চায়, যা ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
ট্রেজারি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, “নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার তেলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং ব্যাঙ্কিং লেনদেনে গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করবে, যার লক্ষ্য রাশিয়ার যুদ্ধে অর্থায়ন প্রভাবিত করা।”
বিশ্ববাজারে প্রভাব
নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পরপরই আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে দাম বাড়তে শুরু করে। ব্রেন্ট ক্রুড প্রতি ব্যারেল ১.৫৬ ডলার বা ২.৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬৪.১৫ ডলারে পৌঁছায়। একইভাবে, মার্কিন ডব্লিউটিআই ক্রুড প্রতি ব্যারেল ১.৫৩ ডলার বা ২.৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬০.০৩ ডলারে দাঁড়ায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরবরাহ সংক্রান্ত উদ্বেগ এবং বাজারের অস্থিরতা তেলের দাম বাড়ানোর প্রধান কারণ। রিস্টাড এনার্জির বাজার বিশ্লেষক ক্লদিও গালিমবারতি উল্লেখ করেছেন, “নিষেধাজ্ঞার ফলে বাজারে সরবরাহে স্বল্পমেয়াদি উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে, যা দাম বৃদ্ধির একটি তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া।”
রাশিয়া
রোসনেফট এবং লুকওয়েল রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল কোম্পানি। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে রাশিয়া যে অর্থায়ন করছে, তার বড় অংশ এই কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে হচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ। এর আগে যুক্তরাজ্যও একই কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞাগুলি অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে, কারণ ভারত ও চীন এখনও রাশিয়ার তেল ক্রয় অব্যাহত রেখেছে। তবে নতুন নিষেধাজ্ঞা মার্কিন চাপ বাড়িয়ে এই সরবরাহ চ্যানেলগুলিকে লক্ষ্য করতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোও রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে এলএনজি আমদানি নিষিদ্ধ করা। যুক্তরাষ্ট্র আরও জানিয়েছে, মস্কোকে অবিলম্বে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করতে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত।
বিশ্বের বিভিন্ন জ্বালানি বাজারে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে সরবরাহ শঙ্কা এবং চাহিদা পরিবর্তন তেলের বাজারকে আরও অস্থির করতে পারে। ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলোও রাশিয়ার তেল ক্রয় পুনর্বিবেচনা করছে, যাতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এড়ানো যায়।
বিশ্লেষণ ও প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ রাশিয়ার তেলের আন্তর্জাতিক সরবরাহকে সংকীর্ণ করতে পারে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারত ও এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর ক্রেতারা মার্কিন তেলের দিকে ঝুঁকতে পারে, যা আটলান্টিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
এছাড়া, স্বল্পমেয়াদে ওপেকপ্লাসের উৎপাদন শিথিলকরণ এবং চীনের তেল মজুত বৃদ্ধিও বাজারের দামকে প্রভাবিত করবে। রাশিয়ার ওপর পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সীমিত হওয়ার পরেও নতুন পদক্ষেপ উত্তেজনা বাড়াবে এবং আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাণিজ্যের গতি পরিবর্তন করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার জ্বালানি খাতকে লক্ষ্য করে নেওয়া হয়েছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের আর্থিক সমর্থন সীমিত করার লক্ষ্য রয়েছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম ইতিমধ্যেই বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এখনও চলমান। বিশ্লেষকদের মতে, ভবিষ্যতে এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজার এবং রাশিয়া-মার্কিন সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে।
এম আর এম – ১৯২০,Signalbd.com