বাংলাদেশ

সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বিএসএফের  ৫৩ জনকে পুশ-ইন

Advertisement

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বুধবার সকালে সিলেট ও সুনামগঞ্জের তিনটি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে নারী, শিশু ও পুরুষ মিলিয়ে ৫৩ জনকে। বিজিবি তাদের হেফাজতে নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, তারা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক এবং অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিল।

সীমান্তে আবারও বিএসএফের পুশ-ইন

বুধবার (১৬ জুলাই) সকালে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার তিনটি পৃথক সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নারী, শিশু ও পুরুষসহ মোট ৫৩ জনকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার কালাইরাগ সীমান্ত দিয়ে ১৯ জন, জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর সীমান্ত দিয়ে ১৩ জন এবং সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার নোয়াকুট সীমান্ত দিয়ে ২১ জনকে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ।

এদের মধ্যে ৩২ জন নারী, ১০ জন শিশু এবং ১১ জন পুরুষ রয়েছে।

বিজিবির প্রতিক্রিয়া ও হেফাজত

ঘটনার পরপরই বিজিবির সদস্যরা সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থান নেন এবং পুশ-ইন হওয়া ব্যক্তিদের আটক করে নিজেদের হেফাজতে নেন।

৪৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হক জানিয়েছেন, “প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি এরা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। তারা বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গিয়েছিল। এখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং আইনি প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।”

এলাকাভিত্তিক তথ্য ও পরিচয়

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার কালাইরাগ সীমান্ত দিয়ে আটক ১৯ জনের মধ্যে সাতটি পরিবারের সদস্য রয়েছে। তারা নড়াইল, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলার বাসিন্দা বলে দাবি করেছেন।

জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর সীমান্তে আটক ১৩ জনের মধ্যে ৯টি পরিবারের সদস্য রয়েছেন। তাদের বাড়ি যশোর, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, সিলেট, সাতক্ষীরা, নড়াইল ও বরিশাল জেলায়।

সুনামগঞ্জের নোয়াকুট সীমান্ত দিয়ে পুশ-ইন হওয়া ২১ জনের মধ্যে ৮টি পরিবারের সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ, ১৫ জন নারী এবং ২ জন শিশু রয়েছে।

এই ঘটনা প্রথম নয়

সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের পুশ-ইনের ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। বিশেষ করে সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের সীমান্তগুলোতে প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অনিয়মিত অভিবাসন ও সীমান্ত নজরদারির ঘাটতির কারণেই এই ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আগেও ভারত থেকে একইভাবে ঠেলে দেওয়া হয়েছে নারী ও শিশুদের, যাদের বেশিরভাগই শ্রমিক শ্রেণির এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী।

পুশ-ইনের প্রভাব: মানবিক সংকটের আশঙ্কা

এই ধরণের পুশ-ইন কার্যক্রম মানবিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা।

তাদের মতে, শিশু ও নারীদের এভাবে সীমান্তে ফেলে যাওয়া তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এ প্রসঙ্গে সীমান্ত নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ইসমাত কাদের বলেন,
“এধরনের পুশ-ইন আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান হওয়া উচিত।”

আইনগত ব্যবস্থা: যাচাই ও মামলা

বিজিবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে আটকদের পরিচয় যাচাই-বাছাই চলছে। যেহেতু তারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিল, তাই দেশে ফিরে আসার পরও তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জৈন্তাপুর থানার ওসি আবুল বাশার মো. বদরুজ্জামান জানিয়েছেন, “আটকদের আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে তাদের বিচারিক আদালতে উপস্থাপন করা হবে।”

সুনামগঞ্জের ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ

এখন পর্যন্ত ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কূটনৈতিক পর্যায়ে বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, পুশ-ইনের এই প্রবণতা দুই দেশের সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।

শেষ কথা

সীমান্ত দিয়ে এভাবে নাগরিকদের পুশ-ইন করা শুধু মানবিক নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্যও হুমকিস্বরূপ।

সরকারের উচিত এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে কূটনৈতিকভাবে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসা এবং একটি স্থায়ী সমাধানের পথ খোঁজা।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্ত পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেয়, তা নির্ভর করছে দুই দেশের পারস্পরিক পদক্ষেপের ওপর।

এম আর এম – ০৩৬৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button