
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এক নৃশংস ঘটনার কারণে গ্রামবাসী স্তম্ভিত। ২২ অক্টোবর রাতে ৮৫ বছর বয়সী মোছা সন্দেস খাতুনকে (৮৫) নৃশংসভাবে হত্যা করেন তার নাতি সজিব হাসান (২২)। হত্যাকাণ্ডের পর নাতি সজিব ফেসবুকে দুটি চমকপ্রদ স্ট্যাটাস দেন, যার একটিতে তিনি লিখেন ‘আল্লাহু আকবার’ এবং পরবর্তীতে চরম হুমকিস্বরূপ লিখেছেন, ‘ইনশাআল্লাহ, একটাও ছাড় পাবে না’। এই ঘটনায় সজিবকে দ্রুত পুলিশ আটক করেছে।
হত্যাকাণ্ডের বিবরণ
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উল্লাপাড়া উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চকবরু গ্রামে সজিব তার দাদির ঘরে প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যা করেন। ঘটনার সময় বাড়িতে কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
ঘাতক নাতি হত্যার পরপরই তার ফেসবুক আইডিতে প্রথমে ‘আল্লাহু আকবার’ এবং কিছুক্ষণ পরে ‘ইনশাআল্লাহ, একটাও ছাড় পাবে না’ স্ট্যাটাস দেন। তার এই পোস্টগুলি স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, সজিব দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত এবং মানসিক সমস্যা রয়েছে। তার বাবা, আহম্মাদ আলী, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশকে অবহিত করেন।
পুলিশি ব্যবস্থা ও তদন্ত
সলঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম জানান, খবর পাওয়ার পর পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, নাতি সজিবের মানসিক সমস্যা এবং মাদকাসক্তি মূলত এই নৃশংস ঘটনার পেছনের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে আটক করেছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
উল্লাপাড়ায় সম্প্রতি কিছু দিন ধরেই বাড়িতে সহিংসতার ঘটনার খবর মিলেছে। তবে, পরিবারের ভেতর থেকে এমন নৃশংস হত্যার ঘটনা প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হলো। সামাজিক মাধ্যমে হত্যার পরে প্রকাশিত স্ট্যাটাস ঘটনাটিকে আরও জটিল এবং উদ্বেগজনক করে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মানসিক অসুস্থতা, পারিবারিক সমস্যার পাশাপাশি মাদকাসক্তি একত্রিত হলে এমন নৃশংস ঘটনার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর গ্রামবাসী আতঙ্কিত। স্থানীয়দের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর নাতির ফেসবুক স্ট্যাটাস জনমনে ভয় ও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় প্রশাসন বলছে, এই ধরনের ঘটনা সমাজে নৈতিকতা এবং পারিবারিক মূল্যবোধের প্রতি গভীর আঘাত হানছে। পুলিশ বলেছে, অভিযুক্ত নাতির পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অপরাধীর মানসিক সমস্যা এবং মাদকাসক্তি এই নৃশংসতার মূল কারণ। তারা উল্লেখ করেছেন, এমন ব্যক্তিদের দ্রুত মনোচিকিৎসা এবং সামাজিক সমর্থন দেওয়া আবশ্যক।
সামাজিক মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে হত্যার পরে হুমকিস্বরূপ পোস্ট দেওয়া অপরাধীকে আরও বিচ্ছিন্ন করে এবং অপরাধের প্রভাব বাড়ায়।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার এই হত্যাকাণ্ড একটি গুরুতর সামাজিক ঘটনা। একদিকে মানসিক অসুস্থতা ও মাদকাসক্তি, অন্যদিকে পারিবারিক সহিংসতা–এই সমন্বয়ই নাতি সজিবকে তার দাদিকে হত্যার মতো নৃশংস কাণ্ড ঘটাতে প্ররোচিত করেছে।
পুলিশ ইতিমধ্যেই অভিযুক্তকে আটক করেছে এবং আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ঘটনার প্রভাব দীর্ঘ সময় ধরে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি করবে।
সামাজিক ও মানসিক বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে পরিবারের মনোচিকিৎসা ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন।
এম আর এম – ১৯১৬,Signalbd.com