আঞ্চলিক

বিদেশ যেতে ব্যর্থ হয়ে মাইক ভাড়া করে এলাকাবাসীকে গালাগাল, নেপথ্যের কাহিনী

Advertisement

 কিশোরগঞ্জের এক যুবক বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন ব্যর্থ হওয়ায় স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে মাইক ভাড়া করে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে জনসমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

বিস্তারিত

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পানান গ্রামের বাসিন্দা সারোয়ার হোসেন রাব্বি, যাকে স্থানীয়রা ‘বাপ্পি’ নামে ডাকে, গত শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) একটি ভিডিও রেকর্ড করে নিজের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেন। ভিডিওতে তিনি মাইক হাতে বসে এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন।
সারোয়ার ভিডিওতে জানান, তিনি সৌদি আরবে প্রবাসী হওয়ার জন্য গত চার মাস ধরে চেষ্টা করছেন। কিন্তু এক লাখ টাকা না থাকার কারণে বিদেশ যাত্রা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ‘গত এক মাসে বিভিন্ন সমিতির কাছে ঋণের জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু সব ঠিক থাকার পরও আমার নামে উল্টাপাল্টা প্রতিকূলতা তৈরি করা হয়। আমি কখনো কারো টাকা খাইনি, কোনো ক্ষতি করি নাই, তবু আমার সঙ্গে এমন আচরণ কেন?’

মাইকের মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ

ভিডিওতে দেখা যায়, সারোয়ার একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় বসে মাইক হাতে স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘এক লাখ টাকার জন্য বিদেশে যেতে পারছি না। প্রতিটি কিস্তি দিতে আসা মানুষদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমি যদি লুকিয়ে বিয়ে না করতাম, বিয়েও সম্ভব হতো না। রাগে ৫০০ টাকা দিয়ে মাইক ভাড়া করেছি এবং বিষয়টি প্রকাশ করছি।’
এক পর্যায়ে তার এক বন্ধুও মাইকের মাধ্যমে গালাগাল করেন। সারোয়ার বলেন, ‘আমার জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার মা, স্ত্রী ও সন্তান আছে। ভিসার মেয়াদ শেষের পথে, আর অর্থ সংগ্রহের জন্য কোনও সাহায্য নেই। তাই এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছি।’

পরিস্থিতির পেছনের কারণ

সারোয়ার হোসেনের কথায়, বিদেশ যাত্রার ব্যর্থতার পেছনে অর্থের ঘাটতি এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা মূল কারণ। তিনি বলেন, ‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে গেলে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করা হয়, যা দিতে রাজি নই। অটোরিকশা এবং বিকাশের ব্যবসার মাধ্যমে যে টাকা আদায় করা সম্ভব, তা মানুষের বাধার কারণে সম্ভব হয়নি।’
এছাড়া তিনি জানান, তার পরিকল্পনা ছিল পরিবারের জন্য ভালো জীবন নিশ্চিত করা এবং সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ তৈরি করা। কিন্তু বিভিন্ন বাধা ও প্রতিবন্ধকতার কারণে তার স্বপ্ন ব্যর্থ হয়েছে।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

এলাকাবাসীর মধ্যে এই ঘটনার পর নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ সারোয়ারের অবস্থার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন, আবার কেউ তার আচরণকে অনভিপ্রেত এবং অযৌক্তিক মনে করেছেন। স্থানীয়দের বক্তব্য, মাইকের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশের পরিবর্তে সমস্যা সমাধানের জন্য সংলাপ এবং সাহায্যের পথ খোঁজা উচিত ছিল।

প্রভাব ও সামাজিক দিক

এই ঘটনার ফলে এলাকার মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে উঠেছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশের সময় সামাজিক দায়বদ্ধতা বজায় রাখা জরুরি। অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

সম্প্রতি কিছু যুবক বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য বিভিন্ন সমিতি ও ব্যাংকের ঋণ সহায়তার উপর নির্ভরশীল হচ্ছেন। আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে কখনো কখনো ব্যর্থতা তাদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি করছে। সারোয়ারের ঘটনা তার নিজস্ব সমস্যার পাশাপাশি সামাজিক বাধার প্রতিফলন।

মতামত

সামাজিক মনোবিজ্ঞানী ড. সামিউল ইসলাম বলেন, ‘যুবকরা আর্থিক ও সামাজিক চাপের মুখোমুখি হলে মানসিক উত্তেজনা প্রকাশের পথ হিসেবে এমন কার্যক্রম বেছে নিতে পারে। এটি সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সহমর্মিতা প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংলাপ এবং সমাধানমূলক পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত।’

সারোয়ার হোসেনের ঘটনা কেবল একটি ব্যক্তিগত ক্ষোভের প্রকাশ নয়, এটি যুবসমাজের আর্থিক ও সামাজিক চাপে প্রভাবিত মানসিক অবস্থার প্রতিফলন। স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজকে সচেতন হতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনায় শান্তি ও সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান হয়।

এম আর এম – ১৮৪৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button