
প্রাইজবন্ড সম্পর্কিত সর্বশেষ তথ্য, পুরস্কার সংখ্যা ও কেনার স্থান | প্রাইজবন্ড ড্র ফলাফল, করনীতি ও নিরাপদ সঞ্চয়পদ্ধতি
বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত সঞ্চয়পদ্ধতি প্রাইজবন্ড আজও অনেক মানুষের মধ্যে এক ধরনের সঞ্চয় ও স্বপ্নের প্রতীক। মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে আপনি কিনতে পারেন প্রাইজবন্ড, যার মাধ্যমে লাভের সম্ভাবনা রয়েছে লাখ লাখ টাকার পুরস্কার পাওয়ার। কিন্তু প্রাইজবন্ড আসলে কী? কেন এটি জনপ্রিয়? কোথায় কেনা যায়? পুরস্কারের পরিমাণ ও কর আদায়ের নিয়ম কী? এসব প্রশ্নের উত্তর আজকের এই প্রতিবেদনে দেওয়া হলো।
প্রাইজবন্ড কী?
প্রাইজবন্ড হলো বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত একধরনের সঞ্চয়পত্র, যা কিনে মানুষ একটি নিরাপদ বিনিয়োগ করতে পারেন। এটি লটারির মতো হলেও একেবারে লটারি নয়, কারণ একবার ড্র শেষ হলেও প্রাইজবন্ডের মেয়াদ শেষ হয় না, পরবর্তী ড্রেও পুরস্কারের সুযোগ থেকে যায়।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম প্রাইজবন্ড চালু হয়। এরপর থেকে এটি দেশের প্রতিটি গৃহস্থালির সঞ্চয়ের এক জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর নিয়মিতভাবে প্রাইজবন্ডের ড্র আয়োজন করে।
কেন কিনবেন প্রাইজবন্ড?
- স্বপ্ন দেখার সুযোগ: মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে আপনি ৬ লাখ টাকার প্রথম পুরস্কারের জন্য প্রতিযোগিতা করতে পারবেন।
- নিরাপদ সঞ্চয়: সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত পণ্য হওয়ায় ঝুঁকি খুবই কম।
- পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা: প্রতি তিন মাস অন্তর অনুষ্ঠিত ড্রয়ে হাজার হাজার পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
- সামাজিক অনুষ্ঠানে উপহার: বিয়েতে, জন্মদিনে বা অন্য কোনও অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রাইজবন্ড উপহার হিসেবে দেওয়া যায়, যা খুবই সম্মানজনক।
- মেয়াদহীন: একবার কিনে রাখলে বারবার ড্রয়ে অংশ নিতে পারবেন যতক্ষণ না পুরস্কার পাওয়া যায় বা বন্ড ভাঙেন।
- সরকারকে ঋণ প্রদান: আপনার কেনা প্রাইজবন্ড সরকারকে ঋণ দেয়, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহার হয়।
প্রাইজবন্ডের পুরস্কার কত?
প্রাইজবন্ড ড্রয়ে মোট পাঁচ ধরনের পুরস্কার দেওয়া হয়, যা সিরিজ অনুযায়ী বিতরণ করা হয়। একটি সিরিজে ৮২টি নম্বর থাকে, প্রতিটি সিরিজে পুরস্কারের সংখ্যা নির্ধারিত থাকে।
- প্রথম পুরস্কার: ৬ লাখ টাকা — প্রতিটি সিরিজ থেকে ১টি করে পুরস্কার (৮২টি সিরিজ × ১ = ৮২ জন বিজয়ী)
- দ্বিতীয় পুরস্কার: ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা — প্রতিটি সিরিজ থেকে ১টি করে পুরস্কার (৮২ জন বিজয়ী)
- তৃতীয় পুরস্কার: ১ লাখ টাকা — প্রতিটি সিরিজ থেকে ২টি করে পুরস্কার (১৬৪ জন বিজয়ী)
- চতুর্থ পুরস্কার: ৫০ হাজার টাকা — প্রতিটি সিরিজ থেকে ২টি করে পুরস্কার (১৬৪ জন বিজয়ী)
- পঞ্চম পুরস্কার: ১০ হাজার টাকা — প্রতিটি সিরিজ থেকে ৪০টি করে পুরস্কার (৩২৮০ জন বিজয়ী)
মোট পুরস্কার সংখ্যা: ৩,৭৭২ টি।
এছাড়া বিশেষ ক্যাম্পেইন বা উৎসব উপলক্ষে অতিরিক্ত পুরস্কার ঘোষণা হতে পারে।
প্রাইজবন্ডের ড্র কখন হয়?
বছরে চারবার নিয়মিত ড্র অনুষ্ঠিত হয়, তারিখগুলো হলো:
- ৩১ জানুয়ারি
- ৩০ এপ্রিল
- ৩১ জুলাই
- ৩১ অক্টোবর
এই ড্রয়ের ফলাফল জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। ড্রয়ের দুই মাস আগে যে প্রাইজবন্ডগুলো কেনা হয়, সেগুলোই পরবর্তী ড্রয়ের জন্য বৈধ হয়।
প্রাইজবন্ড কোথা থেকে কেনা যায় ও কীভাবে পুরস্কার দাবি করবেন?
- কেনা যায়:
বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল অফিস (ময়মনসিংহ অফিস ব্যতীত), তফসিলি ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সব সঞ্চয় ব্যুরো অফিস এবং ডাকঘর থেকে প্রাইজবন্ড ক্রয় করা যায়। কোনো আবেদন ফরম পূরণ করতে হয় না, নগদ টাকা দিয়ে সরাসরি কেনা সম্ভব। - পুরস্কার দাবি:
পুরস্কার পাওয়ার পর নির্ধারিত ফরম (ফরম পিবি-২৩) পূরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর অফিস বা ডাকঘরে জমা দিলে দুই মাসের মধ্যে পুরস্কারের অর্থ ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়ে যায়।
প্রাইজবন্ডের কর ব্যবস্থা
২০২৩ সালের আয়কর আইন অনুযায়ী, প্রাইজবন্ড থেকে পাওয়া পুরস্কারের অর্থ থেকে ২০% কর কর্তন করা হয়। অর্থাৎ পুরস্কারের নগদ অর্থ থেকে সরাসরি কর কাটা হয়।
প্রাইজবন্ডের জনপ্রিয়তা ও ভবিষ্যৎ
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বয়সী মানুষই প্রাইজবন্ড কিনে থাকেন। বিশেষ করে বিয়ের অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে এটি খুব জনপ্রিয়। নগদ উপহার দেওয়ার মতো চাপ বা ঝামেলা কম থাকে, তাই অনেকেই প্রাইজবন্ডকেই প্রাধান্য দেন।
সরকার প্রাইজবন্ড ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। যেমন, অনলাইন প্রাইজবন্ড কেনা ও ফলাফল যাচাই করার সুযোগ সম্প্রতি চালু হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য খুবই সহায়ক।
প্রাইজবন্ড কেনার সময় যা মনে রাখতে হবে
- ড্রয়ের দুই মাস আগে বন্ড কিনতে হবে, তবেই পরবর্তী ড্রয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।
- পুরস্কার পাওয়ার পর তড়িৎগতি দিয়ে দাবি করতে ভুলবেন না, কারণ পুরস্কার দাবির নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে।
- প্রাইজবন্ডের কোনও সুদ বা লভ্যাংশ নেই, এটি মূলত বিনিয়োগ নয়, সঞ্চয়ের একটা মাধ্যম।
(প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন)
১. প্রাইজবন্ড কী?
সরকার অনুমোদিত সঞ্চয়পত্র যা কিনে লটারির মতো পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ থাকে।
২. প্রাইজবন্ড কোথায় কিনতে হয়?
বাংলাদেশ ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অফিস এবং ডাকঘর থেকে।
৩. পুরস্কার কিভাবে পাওয়া যায়?
তিন মাস অন্তর ড্রয়ের মাধ্যমে। পুরস্কার পাওয়া গেলে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে ব্যাংকে দাবি করতে হয়।
৪. প্রাইজবন্ডের মেয়াদ কত?
মেয়াদ নেই, যতদিন চান রাখতে পারেন।
৫. কর কত কাটা হয়?
পুরস্কারের ২০% কর উৎসে কাটা হয়।
প্রাইজবন্ড শুধু একটি সঞ্চয়পত্র নয়, এটি লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা ও অর্জনের সুযোগ। দেশের মানুষজনের জন্য এটি অর্থনৈতিক নিরাপত্তার এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। নিরাপদ ও সহজ সঞ্চয়ের পাশাপাশি এটি একটি সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। তাই আপনার সঞ্চয় পরিকল্পনায় প্রাইজবন্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা বুদ্ধিমানের কাজ।