ক্রিকেট

বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ওয়ানডে – টস হেরে ব্যাটিংয়ে টাইগাররা

Advertisement

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অতিথি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল। এই ম্যাচে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে অভিষেক হচ্ছে তরুণ ক্রিকেটার মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের।

আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে টাইগাররা

সম্প্রতি আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশ দল। টানা ব্যর্থতার চাপ কাটিয়ে নতুন উদ্যমে মাঠে নেমেছে টাইগাররা। এই সিরিজকে তারা দেখছে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে।

মেহেদী হাসান মিরাজ অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তার নেতৃত্বে দলে দেখা গেছে কিছু নতুন সংযোজন ও পরিবর্তন। টিম ম্যানেজমেন্ট জানিয়েছে, তরুণদের সুযোগ দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী দল গড়ে তোলাই তাদের মূল লক্ষ্য।

মিরপুরে নতুন সূচনা

মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম বাংলাদেশের ক্রিকেটের হৃদয় বলা চলে। এখানেই অসংখ্য স্মৃতি, জয়ের গল্প আর উচ্ছ্বাসের জন্ম হয়েছে। দুপুর দেড়টায় শুরু হওয়া ম্যাচে উইকেট ছিল ব্যাটসম্যানদের অনুকূলে। তাই টস হেরে ব্যাটিং পাওয়া বাংলাদেশের জন্য একদিক থেকে ইতিবাচকই ছিল।

মিরাজ বলেন,

“আমরাও ব্যাটিং করতে চেয়েছিলাম। এটা আমাদের হোম গ্রাউন্ড, আর আমরা এই উইকেটে আত্মবিশ্বাসী। এটা নতুন ম্যাচ, নতুন শুরু। সবাই যেন নিজের দায়িত্ব বুঝে ইতিবাচকভাবে খেলে।”

অঙ্কনের স্বপ্নের অভিষেক

বাংলাদেশ ক্রিকেটে তরুণদের উত্থান সবসময় আলোচনায় থাকে। এবার সেই ধারায় যুক্ত হলো নতুন নাম— মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ফলেই এসেছে এই সুযোগ।

রান তাড়নায় ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিং এবং স্পিনের বিপরীতে শক্ত হাতে খেলার দক্ষতার জন্য অঙ্কনকে দলে নেওয়া হয়েছে। তার অভিষেক ঘিরে সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “অঙ্কনের মতো নতুন মুখরাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ।”

দলে ফেরত সৌম্য সরকার

দীর্ঘদিন পর ওয়ানডে দলে ফিরেছেন সৌম্য সরকার। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকে ফিরিয়ে আনার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন কোচিং স্টাফরা। তারা জানিয়েছেন, সৌম্যের অভিজ্ঞতা ও আগ্রাসী মানসিকতা ব্যাটিং অর্ডারে ভারসাম্য আনবে।

সৌম্য নিজেও জানিয়েছেন,

“দলে ফিরতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ। দেশের জন্য আবার ব্যাট হাতে নামা আমার জন্য গর্বের বিষয়। চেষ্টা করব দলকে জিততে সাহায্য করার।”

বাংলাদেশের একাদশ

১. মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক)
২. সাইফ হাসান
৩. নাজমুল হোসেন শান্ত
৪. সৌম্য সরকার
৫. তৌহিদ হৃদয়
৬. নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক)
৭. মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন
৮. রিশাদ হোসেন
৯. তানভীর ইসলাম
১০. তাসকিন আহমেদ
১১. মোস্তাফিজুর রহমান

ওয়েস্ট ইন্ডিজের একাদশ

১. শাই হোপ (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক)
২. ব্র্যান্ডন কিং
৩. অ্যালিক অ্যাথানাজে
৪. কেসি কার্টি
৫. শেরফেন রাদারফোর্ড
৬. জাস্টিন গ্রিভস
৭. রোস্টন চেজ
৮. রোমারিও শেফার্ড
৯. গুদাকেশ মতি
১০. খারি পিয়েরে
১১. জেডেন সিলস

ম্যাচের বিশ্লেষণ ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশের জন্য এই সিরিজ শুধু জয় নয়, আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধারের বিষয়ও। সাম্প্রতিক সময়ের ব্যর্থতার পর দলের মনোবল পুনর্গঠনের জন্য প্রথম ম্যাচটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, টপ অর্ডার ব্যাটারদের দায়িত্ব নিতে হবে। শান্ত, তৌহিদ ও সৌম্যের ব্যাট থেকেই শুরু হতে পারে বড় সংগ্রহের পথ।

বোলিং বিভাগে তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানকে ঘিরে আশা প্রবল। স্পিনে মিরাজ ও রিশাদ থাকায় মধ্য ওভারে নিয়ন্ত্রণ আনার সুযোগ থাকবে।

অন্যদিকে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলও নতুন কিছু মুখ নিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা হোয়াইট বল ফরম্যাটে উন্নতির ধারায় আছে। তাই এই ম্যাচ হবে সমানতালে লড়াইপূর্ণ।

বিশ্বকাপ ২০২৭ – এই সিরিজের গুরুত্ব

২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের পথে প্রতিটি সিরিজই এখন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আইসিসি সুপার লিগ না থাকলেও র‌্যাংকিং পয়েন্ট ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এই সিরিজের ফল অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বিশ্লেষকদের মতে,

“এই সিরিজে জয় পেলে শুধু পয়েন্ট নয়, দলের ভেতরে নতুন করে আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার হবে। তরুণদের জন্য এটি বড় সুযোগ নিজেদের প্রমাণ করার।”

পরিসংখ্যানের দিকে এক নজর

  • মিরপুরে বাংলাদেশের ওয়ানডে জয় হার প্রায় ৭০ শতাংশ।
  • ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ পাঁচ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে তিনটিতে।
  • সর্বশেষ মুখোমুখি সিরিজে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল।
  • তাসকিন আহমেদের মিরপুরে গড় ইকোনমি ৪.৬০ – যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেরা।

আবহাওয়া ও পিচ রিপোর্ট

মিরপুরের আকাশ আংশিক মেঘলা, তবে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। উইকেট শুকনো ও শক্ত হওয়ায় ব্যাটিংবান্ধব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথম ইনিংসে ২৭০-২৯০ রান হতে পারে প্রতিযোগিতামূলক স্কোর।

পিচ রিপোর্টে বলা হয়েছে,

“নতুন বলে সামান্য সুইং থাকতে পারে, কিন্তু ম্যাচ যত এগোবে, ব্যাটসম্যানদের জন্য সহজ হবে রান তোলা।”

সমর্থকদের প্রত্যাশা

গ্যালারি ভরপুর ছিল লাল-সবুজের পতাকায়। দর্শকরা উৎসাহ নিয়ে চিৎকার করছিলেন “বাংলাদেশ, বাংলাদেশ”।

সমর্থকদের প্রত্যাশা, দল যেন ব্যাটিংয়ে স্থিরতা দেখায় এবং ফিল্ডিংয়ে আগের ভুলগুলো সংশোধন করে। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন— “আজকের দিনটাই নতুন শুরু হোক টাইগারদের জন্য।”

আগামীর চ্যালেঞ্জ

এই সিরিজে শুধু জয় নয়, দলের সমন্বয় ও ভবিষ্যতের প্রস্তুতিও জরুরি। তরুণ খেলোয়াড়দের দায়িত্ব নিতে হবে এবং অভিজ্ঞদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড ইতিমধ্যে জানিয়েছে, আগামী বছরে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজের প্রস্তুতিও চলছে। তাই এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজই হতে পারে সেই প্রস্তুতির প্রথম ধাপ।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন অধিনায়ক, নতুন মুখ, নতুন মনোভাব— সব মিলিয়ে মিরপুরের এই সিরিজ হতে পারে এক নতুন সূচনা।

যদি ব্যাটসম্যানরা দায়িত্ব নেয় এবং বোলাররা শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে, তাহলে টাইগাররা সহজেই ফিরতে পারে জয়ের ধারায়। অঙ্কনের অভিষেক ও সৌম্যের প্রত্যাবর্তন নিঃসন্দেহে এই ম্যাচে বাড়তি রঙ যোগ করেছে।

দেশের কোটি ক্রিকেটপ্রেমী আজ অপেক্ষায়— দেখা যাক, মিরপুরের মাঠে কে লিখে দেন জয়ের নতুন গল্প।

MAH – 13366 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button