বিশ্ব

ফাঁসি না ইনজেকশন: আসামি কি বেছে নিতে পারবেন মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ধরন?

Advertisement

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ফাঁসি না ইনজেকশন—দুটির মধ্যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার অধিকার থাকা উচিত কি না। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বিশ্বে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু ভারতের প্রথাগত ফাঁসির প্রক্রিয়া এখনও বহাল।

আদালতের পর্যবেক্ষণ ও আবেদন

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং সানদীপ মেহতার নেতৃত্বে বুধবার মন্তব্য করেন, বিশ্বের অনেক দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ধরন আধুনিকীকরণ হয়েছে। আদালত জানতে চেয়েছে, ভারতের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ফাঁসি বা ইনজেকশন—এই দুটির মধ্যে কোনো একটি পদ্ধতি বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে কি না।

এই পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে আইনজীবী ঋষি মালহোত্রার একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে। আবেদনটি ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৩৫৪(৫)-এর সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ‘গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ঝুলানো হবে’।

বর্তমান আইনি প্রেক্ষাপট

২০২৩ সালে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সনহিতা (বিএনএসএস)-এর ধারা ৩৯৩(৫) মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য নতুন বিধান আনলেও ফাঁসির পদ্ধতি বহাল রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ মন্তব্য করেছে, ফাঁসির প্রক্রিয়া অত্যন্ত পুরনো এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক দেশে এটি পরিবর্তিত হয়েছে।

কেন্দ্রের সিনিয়র আইনজীবী সোনিয়া মাথুরকে বেঞ্চ বলেন, “ফাঁসির পদ্ধতি অনেক দিন পুরনো। বিশ্বের অন্যান্য দেশ পরিবর্তিত পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। মালহোত্রার প্রস্তাব বিবেচনা করা যেতে পারে।”

আবেদনকারীর যুক্তি

ঋষি মালহোত্রা যুক্তি দেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের অন্তত ফাঁসি ও ইনজেকশন—এই দুটির মধ্যে একটি বেছে নেওয়ার অধিকার থাকা উচিত। তার বক্তব্য, “বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশ ইনজেকশন বেছে নিয়েছে। কারণ এটি ফাঁসির তুলনায় অনেক বেশি মর্যাদাপূর্ণ এবং মানবিক। ফাঁসিতে শরীর দীর্ঘ সময় দড়িতে ঝুলে থাকে, যা নিপীড়নমূলক মৃত্যু হিসেবে বিবেচিত হয়।”

সরকারের অবস্থান

কেন্দ্রের হলফনামা অনুযায়ী, ফাঁসি ‘সবচেয়ে নিরাপদ এবং দ্রুততম’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পদ্ধতি। এতে দীর্ঘস্থায়ী মৃত্যুর আশঙ্কা কম থাকে। তবে ইনজেকশন পদ্ধতিতে ভুল বা ‘বোচড এক্সিকিউশন’-এর সম্ভাবনা বেশি এবং প্রশিক্ষিত চিকিৎসকরা প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে আগ্রহী নন।

সরকার জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ড শুধুমাত্র ‘বিরলতম ক্ষেত্রে’ প্রদান করা হয়, যখন অপরাধ ‘অসাধারণ নিষ্ঠুরতা বা নৃশংসতার’ পর্যায়ে পৌঁছে। অতএব, মৃত্যুর প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত আরামদায়ক করলে এর প্রতিরোধমূলক প্রভাব কমে যেতে পারে। তবুও সরকার বিকল্প পদ্ধতি খতিয়ে দেখার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করছে।

আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত

বিশ্বের অনেক দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা সহ বহু দেশ ইনজেকশন পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা এই প্রক্রিয়াকে ফাঁসির তুলনায় ‘কম যন্ত্রণাদায়ক’ বলে উল্লেখ করেছে।

আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ভারতের ফাঁসির প্রথা এখনও ঔপনিবেশিক যুগের, যা আন্তর্জাতিক মান ও মানবাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

আইন বিশ্লেষকরা মনে করেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ধরন পরিবর্তনের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার মানবিক দিক উন্নত হতে পারে।

আইনি বিশ্লেষক অরবিন্দ শর্মা বলেন, “ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রথা পুরনো এবং অনেক দেশের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচিত। ইনজেকশন পদ্ধতি আরও মানবিক এবং মর্যাদাপূর্ণ।”

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

সুপ্রিম কোর্ট পরবর্তী শুনানির তারিখ ১১ নভেম্বর নির্ধারণ করেছে। আদালত কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে, মালহোত্রার প্রস্তাব এবং বর্তমান মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা খতিয়ে দেখতে।

এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মানবিক বিকল্প তৈরি হতে পারে।

শেষ কথা

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ফাঁসি বনাম ইনজেকশন পদ্ধতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার আগে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পর্যালোচনা চাইছে। ভবিষ্যতে আসামিদের মানবিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসতে পারে। তবে, আদালতের চূড়ান্ত রায় এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া নির্ভর করছে পরবর্তী শুনানির ওপর।

এম আর এম – ১৮১২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button