
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার প্রত্যয় জানিয়েছেন। মস্কো সফরের পর বুধবার (১৫ অক্টোবর) রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এটি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আল শারার প্রথম রাশিয়া সফর।
মস্কো সফরের মূল উদ্দেশ্য
সিরিয়ার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই সফরের মূল লক্ষ্য ছিল মস্কোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করা এবং পূর্ববর্তী চুক্তিসমূহকে পুনঃনিশ্চিত করা। আহমেদ আল শারা জানিয়েছেন, “মস্কো-দামেস্ক চুক্তি সকল ক্ষেত্রে অক্ষুণ্ণ থাকবে এবং আমরা রাশিয়ার সঙ্গে আরও শক্তিশালী সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।”
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনীতি, নিরাপত্তা, কৌশলগত অংশীদারিত্ব, জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে যৌথ উদ্যোগ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে সিরিয়ার পুনর্নির্মাণ প্রক্রিয়ায় রাশিয়ার অংশগ্রহণ আরও সক্রিয় করার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
সিরিয়া-রাশিয়া সম্পর্কের ঐতিহ্য
সিরিয়া ও রাশিয়ার সম্পর্ক বহু দশকের পুরনো। ১৯৭০-এর দশক থেকে এই সম্পর্ক শুরু হলেও বিশেষভাবে দৃঢ়তা আসে বাশার আল আসাদের সময়। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের সময় রাশিয়া সরাসরি সামরিক সহায়তা প্রদান করে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সিরিয়ার স্থিতি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আহমেদ আল শারার এই সফর শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য নয়, বরং সিরিয়ার রাজনীতি ও নিরাপত্তা প্রেক্ষাপটে নতুন কৌশল গ্রহণের অংশ। রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে সিরিয়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে চাচ্ছে।
আহমেদ আল শারা ও বাশার আল আসাদের প্রেক্ষাপট
সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ক্ষমতা হারিয়ে নির্বাসনে রাশিয়ায় অবস্থান করছিলেন। তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচিত। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, আহমেদ আল শারার মস্কো সফরের একটি উদ্দেশ্য ছিল বাশার আল আসাদের পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন এবং সিরিয়ায় ফেরানোর বিষয়ে সমঝোতা করা।
সিরিয়ার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “আল শারার সফরই এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সিরিয়া রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে চায়। এর মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করা সম্ভব।”
অর্থনীতি ও পুনর্নির্মাণের সুযোগ
গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়া ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার। অবকাঠামো, শিল্প, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্নির্মাণের জন্য দেশটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর নির্ভর করছে। এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করা সিরিয়ার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।
আল শারা বৈঠকে উল্লেখ করেছেন, “আমরা রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত নতুন চুক্তি করতে আগ্রহী। বিশেষ করে অবকাঠামো, জ্বালানি ও প্রযুক্তি খাতে যৌথ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার অংশগ্রহণ সিরিয়ার পুনর্নির্মাণ প্রক্রিয়ায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে পারে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে সহায়তা করবে।
নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতা
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সিরিয়া একদিকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক terরিজম মোকাবেলায় রাশিয়ার সহায়তা কামনা করছে।
রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা শক্তিশালী করার মাধ্যমে সিরিয়া কৌশলগতভাবে মধ্যপ্রাচ্যে তার অবস্থান সুরক্ষিত করতে চাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, “রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সিরিয়ার জন্য একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করবে, যা অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সিরিয়ার এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিক দৃশ্যপটেও নতুন দিক নির্দেশ করবে। সিরিয়া যদি রাশিয়ার সঙ্গে আরও শক্তিশালীভাবে সংযুক্ত থাকে, তা পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্টের এই কৌশল আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ভারসাম্য এবং অঞ্চলের নিরাপত্তা নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আল শারা মস্কো সফরের পর দেশে ফিরে বলেছেন, “আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নতুন দিগন্তে উন্নীত করতে চাই। রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে সিরিয়া-রাশিয়া যৌথ প্রকল্প ও বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের অবকাঠামো ও শিল্প উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
সিরিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, “আল শারার এই পদক্ষেপ একদিকে দেশকে স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক প্রভাব বাড়ানোর একটি চেষ্টাও। রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভবিষ্যতে সিরিয়ার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করবে।”
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাশিয়ার অংশগ্রহণ সিরিয়ার পুনর্নির্মাণের খরচ কমাতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করতে পারে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারার মস্কো সফর এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার প্রত্যয় দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। এই পদক্ষেপ শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নয়, মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিক অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রেক্ষাপটেও প্রভাব ফেলতে পারে।
আসন্ন মাসগুলোতে সিরিয়া-রাশিয়া সম্পর্কের নতুন চুক্তি এবং যৌথ প্রকল্পের বাস্তবায়ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের নজরে থাকবে এবং সিরিয়ার পুনর্নির্মাণ ও স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
MAH – 13345 I Signalbd.com