
ঢাকাঃ রূপনগর শিয়ালবাড়িতে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাল্টি-ফ্লোর গার্মেন্টস ও পাশের কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লেগে যায়; ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
ঘটনাক্রম ও উদ্ধারকাজের অবস্থা
মিরপুরের রূপনগর এলাকার শিয়ালবাড়ি থেকে মঙ্গলবার ১১:৪০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। প্রথমবারের মতো পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে; পরে ইউনিট সংখ্যা বাড়িয়ে ছয় থেকে আটটি ইউনিট পাঠানো হয়। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে খবর পাওয়া গেছে যে পোশাক কারখানার বহতলা ভবনের এক তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং পাশের কেমিক্যাল গোডাউনে আগুনটি জোরালোভাবে বিস্তার লাভ করে।।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা জানান, পোশাক কারখানার আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে; তবে কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিঝুঁকির কারণে সতর্কতা অবলম্বন করে উদ্ধারকাজ চলছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশিক্ষিত ইউনিট ও উচ্চফ্লো হোসও প্রয়োগ করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত হতাহত বা প্রাণহানিসংক্রান্ত নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি; ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত হয়নি।
অগ্নি বিস্তার ও আশপাশের ঝুঁকি
ঘটনাস্থলটি আবাসিক এলাকায় হওয়ায় আশপাশের ভবন ও দোকানে ধোঁয়া ও উত্তাপে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকায় স্থানীয়দের দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কেমিক্যাল গোডাউনে থাকা পদার্থের ধরন ও পরিমাণ সম্পূর্ণভাবে জানা না থাকায় ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ সতর্কতা পালন করছে।
মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক ও শিল্পাঞ্চলে অতীতেও শিল্প উদ্যোক্তা-আবাসিক মিলিত জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অবৈধ্যভাবে সাজানো কেমিক্যাল, ট্রান্সফর্মার ত্রুটি, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট বা নিরাপত্তা বাধার অভাব—এসব কারণে আগুন দ্রুত ছড়ায় বলে ফায়ার সার্ভিস উল্লেখ করেছে। বিশেষ করে কেমিক্যাল গোডাউনে সঠিক মার্কিং, ভেন্টিলেশন ও আলাদা বার্ন প্রটেকশন না থাকলে ক্ষতি বহুগুণ বাড়ে। তাই ইতি পর্যন্ত মিরপুরে একাধিক আগুনজনিত ঘটনাই নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে তুলে ধরে।
প্রতিক্রিয়া ও কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তারা জানান, তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে এবং আশপাশের মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্যে বলা হয়েছে, আগুন লাগার কারণ তদন্ত করে পরে জানানো হবে। স্থানীয় পুলিশ ও বৈশ্বিকদের স্বাস্থ্যের ওপর ঝুঁকি এড়াতে পরিবেশ বিভাগকে জানানো হয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যালের তালিকা চিহ্নিত করা হচ্ছে।
নিবন্ধিত কিছু স্থানীয় বাসিন্দা ও দোকানদার জানিয়েছেন, আগুনের সূত্রপাত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তারা আতঙ্কিত হয়ে ছুটে বেরিয়েছেন। কয়েকজন বলছেন আগুন নেমে আসা পর্যন্ত ধোঁয়া ও গরমের কারণে শ্বাসকষ্ট অনুভব করেছেন এবং স্থানীয় হাসপাতালে কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, তবে হাসপাতালে ভর্তি বা গুরুতর আঘাতের বিস্তারিত তথ্য এখনো নিশ্চিত নয়।
কীভাবে এ রকম ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়
শিল্প-বাসস্তানের সংমিশ্রণে কাঁচামাল, রাসায়নিক ও অন্যান্য পদার্থ সংরক্ষণের সঠিকরূপে নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দুর্ঘটনা অনিবার্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গার্মেন্টস ও কেমিক্যাল স্টোরেজের জন্য আলাদা জোন নির্ধারণ, অগ্নি নিরাপত্তার জন্য ডিটেকশন ও অ্যালার্ম সিস্টেম বাধ্যতামূলক করা, কর্মীদের নিয়মিত ট্রেনিং এবং সরকারি নিয়ম-নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা জরুরি। তাছাড়া, কেমিক্যাল সেগ্রিগেশন ও লেবেলিং ঠিক থাকলে জরুরি সেবাও দ্রুত কার্যকর করা যাবে।
পরবর্তী করণীয় ও অনুসন্ধান
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে যে তদন্তের পরই আগুন লাগার সঠিক কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানানো হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া আশপাশের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য-নাগাল দিতে মেডিকেল টিম মোতায়েন করা হতে পারে।
মিরপুর শিয়ালবাড়ির পোশাক কারখানা ও কেমিক্যাল গোডাউনে আজকের অগ্নিকাণ্ডে দ্রুত কার্যকর হওয়া ফায়ার সার্ভিসের প্রচেষ্টাকে গুরুত্বপূর্ণ বলা যায়। তবুও, কেমিক্যাল স্টোরেজ ও শিল্প-আবাসিক সংমিশ্রণের কারণে পুনরায় এমন ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি উভয় স্তরে ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তদন্তের রিপোর্টে যে কারণই উঠে আসুক, সেটি থেকে শিক্ষা নিয়ে অবিলম্বে নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ নেওয়াই সবচেয়ে জরুরি।
এম আর এম – ১৭৬৯,Signalbd.com