
দুর্নীতি ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তরুণদের বিক্ষোভে মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশের বাইরে চলে যান, সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত
মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ফ্রান্সের রেডিও আরএফআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে গোপন চুক্তির মাধ্যমে তাকে ফরাসি সামরিক উড়োজাহাজে করে দেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
রাজধানী আন্তানানারিভোতে গত দুই সপ্তাহ ধরে যুবকদের মধ্যে দুর্নীতি, দারিদ্র্য এবং সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছিল। এই বিক্ষোভে সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ‘ক্যাপসাট’ প্রেসিডেন্টের বিরোধিতা করে বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়ায়। ফলে রাজোয়েলিনা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
বিক্ষোভের সূত্রপাত ও প্রসার
বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল গত ২৫ সেপ্টেম্বর। রাজধানীতে পানি ও বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভ অল্প সময়ের মধ্যে দেশের বৃহত্তম গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়।
দুর্নীতি, খারাপ প্রশাসন এবং মৌলিক সেবার অভাবে সাধারণ মানুষ তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে। তরুণরা বিশেষভাবে সরকারের এই ব্যর্থতার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে।
সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও ক্ষমতার সংকট
‘ক্যাপসাট’ ইউনিট, যা ২০০৯ সালে রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় আনতে সহায়তা করেছিল, এবার তার বিরোধিতায় নেমেছে। তারা দাবি করেছে, তারা সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ দিয়েছে।
এছাড়া, প্যারামিলিটারির একটি অংশও বিক্ষোভকারীদের পাশে অবস্থান নিয়েছে। দেশের সিনেট সভাপতিকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট অনুপস্থিত থাকলে সিনেট সভাপতি অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন।
জনরোষ ও সামাজিক প্রেক্ষাপট
রাজধানীর কেন্দ্রে হাজারো মানুষ ‘প্রেসিডেন্টকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
২২ বছর বয়সী এক হোটেলকর্মী বলেন, মাসে ৩ লাখ আরিয়ারি (৬৭ ডলার) আয় করেও তার খাবারের যোগান দেওয়া কঠিন। তিনি আরও বলেন, ‘১৬ বছরে সরকার শুধু নিজেদের ধনী করেছে, আর তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে।’
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন।
অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও মাদাগাস্কারের পরিস্থিতি
মাদাগাস্কারের প্রায় তিন কোটি মানুষের মধ্যে গড় বয়স ৪০ বছরের কম। দেশের তিন-চতুর্থাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। স্বাধীনতার পর থেকে মাথাপিছু জিডিপি ৪৫ শতাংশ কমেছে।
দেশের অর্থনীতি মূলত ভ্যানিলা উৎপাদন ও রপ্তানি, নিকেল, কোবাল্ট, বস্ত্র এবং চিংড়ি রপ্তানির উপর নির্ভরশীল। উচ্চ দারিদ্র্য এবং সীমিত অর্থনৈতিক সুযোগ বিক্ষোভের মূল কারণ হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে।
রাজনৈতিক প্রভাব ও বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া
বিরোধীদলীয় নেতা সিতেনি র্যান্দ্রিয়ানাসোলোনিয়াইকো জানিয়েছেন, পার্লামেন্টের বিরোধী আইনপ্রণেতারা রাজোয়েলিনার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রেসিডেন্টের দেশত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর অবস্থান দেশটিতে সাময়িক ক্ষমতার শূন্যস্থান তৈরি করেছে। বিরোধী দল ও জনগণ এই সুযোগকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করতে পারে।
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
মাদাগাস্কার পরিস্থিতি তরুণ জনগোষ্ঠীর অসন্তোষ ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিফলন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার ও সেনাবাহিনীর বর্তমান আচরণ দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক শান্তির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সেনাবাহিনীর সমন্বয় পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করবে তা মনিটর করছেন।
মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্টের দেশত্যাগ দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি চূড়ান্ত পর্যায়। জনগণের ক্ষোভ, দারিদ্র্য এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন দেশের ভবিষ্যতকে নতুনভাবে আকার দিতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, আগামী কয়েক সপ্তাহে সেনাবাহিনী, বিরোধীদল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ পরিস্থিতির মোড় নির্ধারণ করবে।
এম আর এম – ১৭৬৪,Signalbd.com