বিশ্ব

গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার শুরু

Advertisement

গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের ধাপে ধাপে প্রত্যাহার শুরু হয়েছে। দীর্ঘযুদ্ধের পর যুদ্ধবিরতির কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফিলিস্তিনের গাজার মানুষ ধীরে ধীরে নিজেদের বাসভূমিতে ফিরে আসছেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনারা প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং অন্যান্য এলাকার জন্যও পরিকল্পনা চলছে।

ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের শুরু

তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনের মতে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েল-গাজা সীমান্তের ‘ইয়েলো লাইন’ ক্রসিংয়ের মাধ্যমে সেনাদের ফিরিয়ে আনা শুরু হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত গাজার মধ্যাঞ্চলীয় শহর গাজা সিটির শেজাইয়া, আল তুফাহ এবং জেইতুন এলাকা, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের পূর্বাংশ ও দক্ষিণাংশ থেকে সেনারা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক কর্মকর্তা জানান, “পর্যায়ক্রমে গাজার অন্যান্য এলাকা থেকেও সেনাদের প্রত্যাহার করা হবে। আমরা স্থানীয় পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রত্যাহার কার্যক্রম পরিচালনা করছি।”

ফিলিস্তিনিরা নিজ এলাকা ফিরছে

সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে গাজার ফিলিস্তিনিরা ধীরে ধীরে নিজের বাড়ি ও এলাকায় ফিরে আসছেন। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজেদের এলাকায় ফিরেছেন। বিশেষ করে দক্ষিণ গাজার অস্থায়ী শরণার্থী কেন্দ্র থেকে হাজার হাজার মানুষ উত্তর গাজা ফিরে আসছেন। যানবাহনের সীমিততা ও তেলের সংকটের কারণে অধিকাংশ মানুষ পায়ে হেঁটে যাত্রা করছেন।

গাজার মধ্যাঞ্চলীয় শহর গাজা সিটি এবং পূর্ব গাজার বাসিন্দারাও ধাপে ধাপে নিজের এলাকায় ফিরে আসছেন। তারা বাড়ি ফিরতে সমুদ্র তীরবর্তী আল রশিদ স্ট্রিট এবং সালাহ আল দীন রোড ব্যবহার করছেন।

ধ্বংসস্তূপ ও পুনর্বাসন

ইসরায়েলি বাহিনীর গত দুই বছরের অভিযানে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, বাকি ১০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত। এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। যারা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের অনেকের ঘরবাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

যেসব ফিলিস্তিনি ইতোমধ্যে নিজ এলাকায় ফিরেছেন, তারা তাঁবু খাটিয়ে বসবাস করছেন। গাজার সরকারি মিডিয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা ও মৃতদেহ উদ্ধারের জন্য ইতোমধ্যে ৫ হাজার মিশন পরিচালিত হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতি ও আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত একটি নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। ইসরায়েল এবং গাজা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস উভয়ই এই পরিকল্পনায় সম্মতি জানায়। এরপর ১০ অক্টোবর শুক্রবার গাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়।

ইতিহাসের ভয়াবহ হামলা ও প্রতিক্রিয়া

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজার হামাস সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এটি ইসরায়েলের ৭৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও প্রাণঘাতী হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ইসরায়েল এই হামলার জবাবে ৮ অক্টোবর থেকে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। সেই অভিযান চলাকালীন গাজায় ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।

পুনর্বাসন ও মানবিক সহায়তা

গাজার মানুষ এখন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। শিশু, নারী এবং বৃদ্ধদের জন্য বিশেষ সহায়তা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং স্থানীয় সরকারি সংস্থা গাজায় খাবার, পানি, ওষুধ এবং ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা ও জরুরি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

গাজার ভবিষ্যৎ

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গাজা উপত্যকার পুনর্বাসন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ধ্বংসস্তূপ সরানো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল পুনর্গঠন, এবং বাসিন্দাদের নিরাপদভাবে ফিরে আসার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন।

ফিলিস্তিনি নেতারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে যুদ্ধবিরতির পর মানুষ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন। তবে নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা

জাতিসংঘ, তুরস্ক, কাতার এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজার পুনর্বাসন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। তারা ধ্বংসস্তূপ সরানো, খাদ্য বিতরণ এবং চিকিৎসা সহায়তার জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। পাশাপাশি, মানবাধিকার সংস্থাগুলো মৃতদেহ উদ্ধারের কার্যক্রম তদারকি করছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ধীরে ধীরে সেনা প্রত্যাহার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম গাজার মানুষের জীবনে আশা ফিরিয়ে আনবে। তবে, এটি একটি সংবেদনশীল প্রক্রিয়া এবং নিরাপত্তা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার ও যুদ্ধবিরতির প্রভাব এখন স্পষ্ট। গাজার মানুষ নিজ এলাকায় ফিরে আসার মাধ্যমে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন। ধ্বংসস্তূপের পুনর্বাসন, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সহায়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এই মুহূর্তে গাজার মূল চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টা গাজার মানুষের জন্য নতুন আশা ও জীবন ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

MAH – 13282 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button