ইরান সম্প্রতি পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত প্রতিরক্ষা জোট নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির শীর্ষ সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া রহিম সাফাভি চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং ইরানেরও এতে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রতিরক্ষা চুক্তির বিস্তারিত
১৭ সেপ্টেম্বর সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, এক দেশকে তৃতীয় কোনো দেশ আক্রমণ করলে অপর দেশ তার সুরক্ষা দেবে। সৌদি আরবের তরফে যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান এবং পাকিস্তানের তরফে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া রহিম সাফাভি বলেন, এই চুক্তি আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এটি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য দেশও এই চুক্তিতে যোগ দিতে পারবে এবং ইরানেরও এতে অংশ নেওয়া উচিত।
ইরানের প্রস্তাব ও কৌশল
সাফাভি উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক ছাতার নিচে ইরান, সৌদি আরব ও ইরাকের সমষ্টিগত জোট গঠন করা সম্ভব। যদিও তার ধারণা অনুযায়ী, ইসলামাবাদ ও রিয়াদের এই চুক্তি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন ছাড়া সম্ভব হতো না। তবে তিনি বলেন, আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ইরানের উচিত জোটে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নেওয়া।
ইরানের সেনাবাহিনীর অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল আবদোলরহিম মৌসাভি ও কমান্ডার-ইন-চিফ মেজর জেনারেল আমির হাতামি এ বিষয়ে একই মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, তেহরান আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি খোলা মনে বিবেচনা করবে এবং নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়েও নজর দেবে।
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক উন্নয়ন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। চুক্তির স্বাক্ষরের একদিন আগে দোহায় জরুরি আরব-ইসলামিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের হামলার পর মুসলিম দেশগুলো বিদেশি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফও মুসলিম দেশগুলোকে পশ্চিমাদের ন্যাটো জোটের মতো একটি ইসলামিক জোট গঠনের আহ্বান জানান।
সম্ভাব্য প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
চুক্তিটি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা ও সামরিক সমন্বয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ইরানের অংশগ্রহণে আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা জোট আরও শক্তিশালী হতে পারে। তবে চুক্তি কার্যকর হলে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য শক্তিধর দেশের প্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ইরানের পদক্ষেপ কূটনৈতিক ও সামরিক সমন্বয় উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
বিশ্লেষণ ও মন্তব্য
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের সম্ভাব্য অংশগ্রহণ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য শক্তির সঙ্গে সম্পর্ককে জটিলতর করতে পারে। ইরানের অংশগ্রহণ মূলত তার কৌশলগত ও সামরিক স্বার্থের সাথে সঙ্গতি রাখবে।
পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামোয় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ইরানও এ চুক্তিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে চাইছে। এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক ও কূটনৈতিক ভারসাম্য প্রভাবিত করতে পারে। প্রশ্ন রয়ে গেছে, ইরানের যোগদান কতটা কার্যকর হবে এবং এটি আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যকে কীভাবে প্রভাবিত করবে।
এম আর এম – ১৫৬৯,Signalbd.com



