জাতীয়

অধ্যাপক ইউনূস রোম রওনা, ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামে যোগ দিতে।

Advertisement

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়নের মডেলকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্টে যোগ দিতে যাচ্ছেন। আগামীকাল, রোববার সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রোমের উদ্দেশে যাত্রা করবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “অধ্যাপক ইউনূসের এই সফর শুধু বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের সক্রিয় কূটনৈতিক ভূমিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশ।”

ফোরামের মূল আকর্ষণ: প্রধান উপদেষ্টার বক্তৃতা

ফোরামের মূল অধিবেশনে অধ্যাপক ইউনূস আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। তাঁর বক্তৃতায় খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য নিরসন, টেকসই উন্নয়ন ও নতুন উদ্ভাবনী কৃষি প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হবে। বিশেষত, অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের গ্রামীন অর্থনীতি, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার সাফল্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরবেন।

ফোরামটি মূলত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) দ্বারা আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিশ্বের নীতিনির্ধারক, গবেষক, উদ্যোক্তা এবং বিজ্ঞানীরা একত্রিত হয়ে খাদ্য ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ, নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে মতবিনিময় করেন।

এবারের ইভেন্ট রোমে FAO’র সদর দপ্তরে ১০ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশগ্রহণকারীরা বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই কৃষি, খনিজ সম্পদ ব্যবহার ও দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্পর্কিত বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহণ করবেন।

বৈঠক ও কূটনৈতিক আলোচনা

সফরের অংশ হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই বৈঠকগুলোতে প্রধানত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে:

  • বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ
  • দারিদ্র্য নিরসন ও সামাজিক উদ্যোক্তা উদ্যোগ
  • টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু বান্ধব কৃষি প্রযুক্তি
  • আন্তর্জাতিক সহায়তা ও বিনিয়োগের সুযোগ

প্রধান উপদেষ্টা এই বৈঠকগুলোকে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি খাতের উন্নয়ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরার একটি সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করবেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন বৈশ্বিক নীতিনির্ধারক ও গবেষকের সঙ্গে মতবিনিময় করে দেশের টেকসই উন্নয়ন নীতি ও উদ্ভাবনী পরিকল্পনা প্রবর্তনের পথ প্রশস্ত করবেন।

বাংলাদেশের কূটনৈতিক উপস্থিতি ও গুরুত্ব

প্রধান উপদেষ্টার এই সফরকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সক্রিয় কূটনৈতিক ভূমিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য নিরসন এবং টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতা ও উদ্ভাবনী মডেল বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ শুধু দেশীয় অর্জনগুলো প্রদর্শন করবে না, বরং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও নতুন প্রযুক্তি বিনিময়ের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি করবে।

ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব শুধুমাত্র সরকারের পক্ষ থেকে নয়, বরং বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোক্তা, কৃষক সমিতি এবং গবেষক দলও এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস: খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক উদ্যোক্তার পথপ্রদর্শক

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি গ্রামীন ব্যাংক ও সামাজিক উদ্যোক্তা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা, খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য নিরসন ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। তাঁর মাইক্রোফাইন্যান্স ও সামাজিক ব্যবসা মডেল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী তাঁর সাফল্য বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে উদ্ভাবনী ও মানবিক নেতৃত্বের দেশ হিসেবে পরিচিত করেছে। এই সফর সেই নেতৃত্বের ধারাবাহিকতাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরবে।

ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের গুরুত্ব

ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম মূলত খাদ্য ও কৃষি সংক্রান্ত বৈশ্বিক সমস্যা ও সমাধান নিয়ে কাজ করে। ফোরামের লক্ষ্য হলো:

  1. খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
  2. টেকসই কৃষি পদ্ধতি ও প্রযুক্তি উন্নয়ন
  3. দারিদ্র্য নিরসনে সামাজিক উদ্যোক্তাদের ভূমিকা বৃদ্ধি
  4. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও জ্ঞান ভাগাভাগি

প্রতিটি সেশনেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারক, গবেষক ও উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করেন। এ ধরনের ইভেন্ট আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, গবেষণা ও নীতি বিনিময় সহজ করে।

সফরের সময়সূচি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের রোম সফরের সময়সূচি নিম্নরূপ:

  • ১১ অক্টোবর: ঢাকা থেকে রোম রওনা
  • ১২-১৬ অক্টোবর: ফোরামের মূল অধিবেশন, বৈঠক এবং আলোচনা
  • ১৭ অক্টোবর: দেশে ফেরার প্রস্তুতি
  • ১৫ অক্টোবর: বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন

এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন নীতি আন্তর্জাতিক মানচিত্রে আরও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা হবে।

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ

বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, অধ্যাপক ইউনূসের এই সফর বাংলাদেশের কূটনৈতিক উপস্থিতি ও খাদ্য নিরাপত্তা নীতি প্রচারের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে, তিনি খাদ্য উৎপাদন, দারিদ্র্য হ্রাস এবং সামাজিক উদ্যোক্তা উদ্যোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরবেন।

ফোরামের অন্যান্য অতিথিরা অধ্যাপক ইউনূসের অভিজ্ঞতা থেকে শিখে নিজেদের দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন নীতি প্রয়োগের প্রেরণা পাবেন।

MAH – 13264 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button