
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশের বাজারে আবারও বেড়েছে স্বর্ণের দাম। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ঘোষণা করেছে, ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম নতুন করে নির্ধারিত হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার ১০১ টাকায়।
দেশের বাজারে স্বর্ণের দামের রেকর্ড উর্ধ্বগতি অব্যাহত। মাত্র একদিনের ব্যবধানে ৬ হাজার ৯০৬ টাকা বেড়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৯ হাজার ১০১ টাকা হয়ে গেছে। এই নতুন মূল্য দেশের ইতিহাসে স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম হিসেবে ধরা হচ্ছে।
নতুন স্বর্ণের দাম বিস্তারিত
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে। স্থানীয় বাজারে পিওর গোল্ড বা তেজাবি স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির কারণে নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন দামের ভিত্তিতে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার ১০১ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৯৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৪২ হাজার ৩০১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজুস জানিয়েছে, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যোগ করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।
স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির পেছনের কারণ
বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে স্বর্ণের মূল্য বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামা, তেল ও ডলার বিনিময় হার, এবং স্থানীয় চাহিদা–প্রস্তাবের প্রভাব এই মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্ববাজারে সোনার দাম বৃদ্ধির প্রভাব সরাসরি দেশের বাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে। স্বর্ণ মূলত বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের মাধ্যম হওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
পূর্বের দাম ও তুলনা
গত ৮ অক্টোবর বাজুস ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ২ হাজার ১৯৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল। এর ফলে একদিনের ব্যবধানে ৬ হাজার ৯০৬ টাকা বেড়েছে।
২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম মোট ৬৩ বার সমন্বয় করা হয়েছে। তার মধ্যে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে ৪৫ বার, আর কমানো হয়েছে ১৮ বার। ২০২৪ সালে মোট ৬২ বার সমন্বয় করা হয়েছিল, যেখানে দাম বাড়ানো হয়েছিল ৩৫ বার এবং কমানো হয়েছিল ২৭ বার।
অন্যান্য ক্যারেট ও রুপার দাম
নতুন সমন্বয়ের সঙ্গে রুপার দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৯৮১ টাকা। ২১ ক্যারেটের রুপার দাম ৪ হাজার ৭৪৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ৪ হাজার ৭১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ৩ হাজার ৫৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এটি দেশের বাজারে রুপার সর্বোচ্চ দাম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রভাব ও বাজারের প্রতিক্রিয়া
স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির ফলে ক্রেতারা কিছুটা সচেতন হয়ে উঠেছেন। সাধারণ মানুষ এখন স্বর্ণ ক্রয় করার ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিনিয়োগমূলক স্বর্ণ কেনার আগ্রহ কিছুটা কমেছে।
তবে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বর্ণ এখনও জনপ্রিয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্ববাজারে অস্থিরতা থাকলে দেশেও স্বর্ণের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি স্বাভাবিক। বৈশ্বিক বাজারে সোনার দাম বাড়ার সঙ্গে ডলারের উর্ধ্বগতি ও স্থানীয় চাহিদার সমন্বয় এই ফলাফল এসেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বর্ণ ক্রয় ও বিক্রয় করতে গেলে বাজারের ওঠানামার দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। বিনিয়োগকারীরা ছোট ছোট পরিমাণে ক্রয় করলে ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারবেন।
২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৯ হাজার ১০১ টাকায় পৌঁছানো দেশের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। স্বর্ণ ও রুপার বাজারে এই উর্ধ্বগতি ক্রেতাদের ভাবনায় প্রভাব ফেলছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থার উপর নির্ভর করে স্বর্ণের দাম আরও পরিবর্তন হতে পারে। তাই বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের জন্য সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
এম আর এম – ১৬৮৭,Signalbd.com