পাকিস্তানের সঙ্গে ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই হচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা সুবিধা চালুর পথে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি চলছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে সন্ত্রাস, মাদক, রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা নিয়ে সমঝোতা
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা সুবিধা চালুর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বুধবার (২৩ জুলাই) সচিবালয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন রেজা নাকভির সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে এই বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যে ভিসা নীতিতে সহজীকরণসহ নিরাপত্তা, বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং মানবিক ইস্যুতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়।
দুই দেশের সম্পর্ক ও পূর্ববর্তী উদ্যোগ
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান—দুই দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট একটি সময় অভিন্ন ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সম্পর্ক কিছুটা জটিল থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্তরে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর আগেও উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা ও পর্যটন সহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে তোলার চেষ্টার অংশ হিসেবে ভিসা সহজীকরণের আলোচনা হয়। এবার সেটি বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে।
নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস দমন নিয়ে পারস্পরিক আলোচনা
সাক্ষাতে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মাদক ও সন্ত্রাসবাদ দমন, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস দমন তাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার এবং বাংলাদেশ চাইলে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে। জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশও মাদক ও সন্ত্রাস দমনে দৃঢ়ভাবে কাজ করছে, এবং পারস্পরিক সহযোগিতা এই কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করতে পারে।
পুলিশ প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহযোগিতা
দুই দেশের পুলিশ একাডেমির মধ্যে যৌথ প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তি বিনিময় নিয়েও আলোচনা হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের সারদা পুলিশ একাডেমি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও সম্মানিত প্রতিষ্ঠান।
পাকিস্তান প্রস্তাব দিয়েছে, পুলিশ প্রশিক্ষণে যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই করা যেতে পারে, যাতে জবাবদিহিতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
রোহিঙ্গা সংকট: মানবিকতা ও সহযোগিতার বার্তা
রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও উভয়পক্ষ আলোচনা করেছে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব না দিলেও বিশেষ কোডযুক্ত পাসপোর্ট প্রদান করছে, যাতে তারা আলাদা করে চিহ্নিত হয়।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ সময় উল্লেখ করেন, “আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি, যা একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ।” তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য পাকিস্তানের সক্রিয় সহায়তা কামনা করেন।
ভবিষ্যৎ উদ্যোগ ও সম্পর্ক উন্নয়ন
সাক্ষাতের শেষে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান। একইসঙ্গে, তিনি সম্প্রতি ঢাকায় একটি বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানান।
উভয়পক্ষই ভবিষ্যতে পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। এমনকি অন অ্যারাইভাল ভিসা বাস্তবায়ন হলে তা দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা, শিক্ষা ও কূটনৈতিক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন এক পর্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, যার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে যাচ্ছে ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা সুবিধা। এটি বাস্তবায়ন হলে দুই দেশের সরকারি যোগাযোগ সহজ হবে এবং বহুপাক্ষিক সম্পর্কের গতিও বাড়বে।
তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, আইনি কাঠামো এবং পারস্পরিক আস্থা বজায় রাখা জরুরি। এখন দেখার বিষয়, এই উদ্যোগ কতটা দ্রুত এবং সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়।
এম আর এম – ০৪৯৩ , Signalbd.com